উপহার-গীতি

ছেলেবেলা হতে বালা, যত গাঁথিয়াছি মালা

       যত বনফুল আমি তুলেছি যতনে

ছুটিয়া তোমারি কোলে, ধরিয়া তোমারি গলে

       পরায়ে দিয়াছি সখি তোমারি চরণে।

আজো গাঁথিয়াছি মালা, তুলিয়া বনের ফুল

       তোমারি চরণে সখি দিব গো পরায়ে —

না-হয় ঘৃণার ভরে, দলিয়ো চরণতলে

       হৃদয় যেমন করে দলেছ দুপায়ে।

পৃথিবীর নিন্দাযশে, কটাক্ষ করি না বালা

       তুমি যদি সোহাগেতে করহ গ্রহণ

আমার সর্বস্বধন, কবিতার মালাগুলি

       পৃথিবীর তরে আমি করি নি গ্রন ্ থন।

আমি যে-সকল গান গাই গো মনের সুখে

       সপ্তসুরে পূর্ণ করি এ শূন্য আকাশ

পৃথিবীর আর কেহ, শুনুক বা না শুনুক

       তুমি যেন শুন বালা, এই অভিলাষ!

তোমার লাগিবে ভালো, তুমি গো বলিবে ভালো,

       গলাবে তোমারি মন এ সংগীত ' ধ্বনি

আমার মর্মের কথা, তুমিই বুঝিবে সখি

       আর কেহ না বুঝুক খেদ নাহি গণি

একদিন মনে পড়ে, যাহা তাহা গাইতাম

       সকলি তোমার সখি লাগিত গো ভালো

নীরবে শুনিতে তুমি, সমুখে বহিত নদী

       মাথায় ঢালিত চাঁদ পূর্ণিমার আলো।

সুখের স্বপনসম, সেদিন গেল গো চলি

       অভাগা অদৃষ্টে হায় এ জন্মের তরে

আমার মনের গান মর্মের রোদনধ্বনি

       স্পর্শও করে না আজ তোমার অন্তরে।

তবুও — তবুও সখি তোমারেই শুনাইব

       তোমারেই দিব সখি যা আছে আমার।

দিনু যা মনের সাথে, তুলিয়া লও তা হাতে

       ভগ্নহৃদয়ের এই প্রীতি-উপহার।