কবিতা

সে-এক সুখের দিন হয়ে গেছে শেষ।

        সেইরূপ রহিলি না কেন চিরকাল।

না দেখি মনুষ্যমুখ, না জানিয়া দুঃখ সুখ,

        না করিয়া অনুভব মান অপমান।

অজ্ঞান শিশুর মতো, আনন্দে দিবস যেত,

সংসারের গোলমালে থাকিয়া অজ্ঞান।

তা হলে তো ঘটিত না এ-সব জঞ্জাল।

সেইরূপ রহিলি না কেন চিরকাল।

সৌভাগ্যে হানিয়া বাজ, তা হলে তো তোরে আজ

অনাথা ভিখারীবেশে কাঁদিতে হত না।

পদাঘাতে উপহাসে, তা হলে তো কারাবাসে

        সহিতে হত না শেষে এ ঘোর যাতনা।

অরণ্যেতে নিরিবিলি, সে যে তুই ভালো ছিলি,

        কী কুক্ষণে করিলি রে সুখের কামনা।

দেখি মরীচিকা হায় আনন্দে বিহ্বলপ্রায়

         না জানি নৈরাশ্য শেষে করিবে তাড়না।

আর্যরা আইল শেষে, তোর এ বিজন দেশে,

        নগরেতে পরিণত হল তোর বন।

হরষে প্রফুল্ল মুখে হাসিলি সরলা সুখে,

        আশার দর্পণে মুখ দেখিলি আপন।

ঋষিগণ সমস্বরে অই সামগান করে

        চমকি উঠিছে আহা হিমালয় গিরি।

ওদিকে ধনুর ধ্বনি, কাঁপায় অরণ্যভূমি

        নিদ্রাগত মৃগগণে চমকিত করি।

সরস্বতী নদীকূলে, কবিরা হৃদয় খুলে

        গাইছে হরষে আহা সুমধুর গীত।

বীণাপাণি কুতূহলে, মানসের শতদলে,

        গাহেন সরসী-বারি করি উথলিত।

সেই-এক অভিনব, মধুর সৌন্দর্য তব,

        আজিও অঙ্কিত তাহা রয়েছে মানসে।

আঁধার সাগরতলে একটি রতন জ্বলে

        একটি নক্ষত্র শোভে মেঘান্ধ আকাশে।