সোনার তরী
দেখায়ে গোপন পথ দিতে মুক্ত করি
পাঠশালা-কারা হতে; কোথা গৃহকোণে
নিয়ে যেতে নির্জনেতে রহস্য-ভবনে;
জনশূন্য গৃহছাদে আকাশের তলে
কী করিতে খেলা, কী বিচিত্র কথা বলে
ভুলাতে আমারে, স্বপ্নসম চমৎকার
অর্থহীন, সত্য মিথ্যা তুমি জান তার।
দুটি কর্ণে দুলিত মুকুতা, দুটি করে
সোনার বলয়, দুটি কপোলের ‘পরে
খেলিত অলক, দুটি স্বচ্ছ নেত্র হতে
কাঁপিত আলোক, নির্মল নির্ঝর-স্রোতে
চূর্ণরশ্মি-সম। দোঁহে দোঁহা ভালো করে
চিনিবার আগে নিশ্চিন্ত বিশ্বাসভরে
খেলাধুলা ছুটাছুটি দুজনে সতত—
কথাবার্তা বেশবাস বিথান বিতত।
তার পরে একদিন— কী জানি সে কবে—
জীবনের বনে যৌবনবসন্তে যবে
প্রথম মলয়বায়ু ফেলেছে নিশ্বাস,
মুকুলিয়া উঠিতেছে শত নব আশ,
সহসা চকিত হয়ে আপন সংগীতে
চমকিয়া হেরিলাম— খেলাক্ষেত্র হতে
কখন অন্তরলক্ষ্মী এসেছ অন্তরে,
আপনার অন্তঃপুরে গৌরবের ভরে
বসি আছ মহিষীর মতো। কে তোমারে
এনেছিল বরণ করিয়া। পুরদ্বারে
কে দিয়াছে হুলুধ্বনি! ভরিয়া অঞ্চল
কে করেছে বরিষন নবপুষ্পদল
তোমার আনম্র শিরে আনন্দে আদরে!
সুন্দর সাহানারাগে বংশীর সুস্বরে
কী উৎসব হয়েছিল আমার জগতে,
যেদিন প্রথম তুমি পুষ্পফুল্ল পথে
লজ্জামুকুলিত মুখে রক্তিম অম্বরে