সোনার তরী

শিশুহীন শয়ন-শিয়রে। সেই আদিজননীর

জনশূন্য জীবশূন্য স্নেহচঞ্চলতা সুগভীর,

আসন্ন প্রতীক্ষাপূর্ণ সেই তব জাগ্রত বাসনা,

অগাধ প্রাণের তলে সেই তব অজানা বেদনা

অনাগত মহাভবিষ্যৎ লাগি হৃদয়ে আমার

যুগান্তরস্মৃতিসম উদিত হতেছে বারম্বার।

আমারো চিত্তের মাঝে তেমনি অজ্ঞাতব্যথাভরে,

তেমনি অচেনা প্রত্যাশায়, অলক্ষ্য সুদূর-তরে

        উঠিছে মর্মর স্বর। মানবহৃদয়-সিন্ধুতলে

যেন নব মহাদেশ সৃজন হতেছে পলে পলে,

আপনি সে নাহি জানে। শুধু অর্ধ-অনুভব তারি

ব্যাকুল করেছে তারে, মনে তার দিয়েছে সঞ্চারি

আকারপ্রকারহীন তৃপ্তিহীন এক মহা আশা —

প্রমাণের অগোচর, প্রত্যক্ষের বাহিরেতে বাসা।

তর্ক তারে পরিহাসে, মর্ম তারে সত্য বলি জানে,

সহস্র ব্যাঘাত-মাঝে তবুও সে সন্দেহ না মানে,

জননী যেমন জানে জঠরের গোপন শিশুরে,

প্রাণে যবে স্নেহ জাগে, স্তনে যবে দুগ্ধ উঠে পূরে।

প্রাণভরা ভাষাহরা দিশাহারা সেই আশা নিয়ে

চেয়ে আছি তোমা পানে ; তুমি সিন্ধু, প্রকাণ্ড হাসিয়ে

টানিয়া নিতেছ যেন মহাবেগে কী নাড়ীর টানে

আমার এ মর্মখানি তোমার তরঙ্গ-মাঝখানে

কোলের শিশুর মতো।

 

 

                       হে জলধি, বুঝিবে কি তুমি

আমার মানবভাষা। জান কি তোমার ধরাভূমি

পীড়ায় পীড়িত আজি ফিরিতেছে এ-পাশ ও-পাশ,

চক্ষে বহে অশ্রুধারা, ঘন ঘন বহে উষ্ণ শ্বাস।

নাহি জানে কী যে চায়, নাহি জানে কিসে ঘুচে তৃষা,

আপনার মনোমাঝে আপনি সে হারায়েছে দিশা

বিকারের মরীচিকা-জালে। অতল গম্ভীর তব