সোনার তরী
               মাতৃদুগ্ধ পরিতৃপ্ত সুখনিদ্রারত
               সদ্যোজাত সুকুমার গোবৎসের মতো
               নীলাম্বরে শুয়ে। দীপ্ত রৌদ্রে অনাবৃত
               যুগ-যুগান্তরক্লান্ত দিগন্তবিস্তৃত
               ধরণীর পানে চেয়ে ফেলিনু নিশ্বাস।
   
   
                কী গভীর দুঃখে মগ্ন সমস্ত আকাশ,
                সমস্ত পৃথিবী। চলিতেছি যতদূর
                শুনিতেছি একমাত্র মর্মান্তিক সুর
               ‘ যেতে আমি দিব না তোমায় '। ধরণীর
                প্রান্ত হতে নীলাভ্রের সর্বপ্রান্ততীর
                ধ্বনিতেছে চিরকাল অনাদ্যন্ত রবে,
               ‘ যেতে নাহি দিব। যেতে নাহি দিব। ' সবে
                 কহে ‘ যেতে নাহি দিব '। তৃণ ক্ষুদ্র অতি
                 তারেও বাঁধিয়া বক্ষে মাতা বসুমতী
                 কহিছেন প্রাণপণে ‘ যেতে নাহি দিব '।
                 আয়ুক্ষীণ দীপমুখে শিখা নিব-নিব,
                 আঁধারের গ্রাস হতে কে টানিছে তারে
                 কহিতেছে শত বার ' যেতে দিব না রে '।
        এ অনন্ত চরাচরে স্বর্গমর্ত ছেয়ে
                  সব চেয়ে পুরাতন কথা, সব চেয়ে
                  গভীর ক্রন্দন — ‘ যেতে নাহি দিব '।    হায়,
                  তবু যেতে দিতে হয়, তবু চলে যায়।
                  চলিতেছে এমনি অনাদি কাল হতে।
                  প্রলয়সমুদ্রবাহী সৃজনের স্রোতে
                  প্রসারিত-ব্যগ্র-বাহু জ্বলন্ত-আঁখিতে
                 ‘ দিব না দিব না যেতে ' ডাকিতে ডাকিতে
                  হু হু করে তীব্রবেগে চলে যায় সবে
                  পূর্ণ করি বিশ্বতট আর্ত কলরবে।
                  সম্মুখ-ঊর্মিরে ডাকে পশ্চাতের ঢেউ