সোনার তরী
           ও হাঁড়িতে ঢাকা আছে দুই-চারিখান
            গুড়ের পাটালি ; কিছু ঝুনা নারিকেল ;
              দুই ভাণ্ড ভালো রাই-সরিষার তেল ;
             আমসত্ত্ব আমচুর ; সের দুই দুধ —
             এই-সব শিশি কৌটা ওষুধবিষুধ।
             মিষ্টান্ন রহিল কিছু হাঁড়ির ভিতরে,
             মাথা খাও, ভুলিয়ো না, খেয়ো মনে করে। '
             বুঝিনু যুক্তির কথা বৃথা বাক্যব্যয়।
              বোঝাই হইল উঁচু পর্বতের ন্যায়।
             তাকানু ঘড়ির পানে, তার পরে ফিরে
             চাহিনু প্রিয়ার মুখে ; কহিলাম ধীরে,
            ‘ তবে আসি '। অমনি ফিরায়ে মুখখানি
              নতশিরে চক্ষু- ' পরে বস্ত্রাঞ্চল টানি
              অমঙ্গল অশ্রুজল করিল গোপন।
   
   
               বাহিরে দ্বারের কাছে বসি অন্যমন
              কন্যা মোর চারি বছরের। এতক্ষণ
              অন্য দিনে হয়ে যেত স্নান সমাপন,
              দুটি অন্ন মুখে না তুলিতে আঁখিপাতা
              মুদিয়া আসিত ঘুমে ; আজি তার মাতা  
              দেখে নাই তারে ; এত বেলা হয়ে যায়
              নাই স্নানাহার। এতক্ষণ ছায়াপ্রায়
              ফিরিতেছিল সে মোর কাছে কাছে ঘেঁষে,
              চাহিয়া দেখিতেছিল মৌন নির্নিমেষে
              বিদায়ের আয়োজন। শ্রান্তদেহে এবে
              বাহিরের দ্বারপ্রান্তে কী জানি কী ভেবে
              চুপিচাপি বসে ছিল। কহিনু যখন
             ‘ মা গো, আসি ' সে কহিল বিষণ্ন-নয়ন
              ম্লান মুখে, ‘ যেতে আমি দিব না তোমায়। '
              যেখানে আছিল বসে রহিল সেথায়,
              ধরিল না বাহু মোর, রুধিল না দ্বার,