মুহূর্ত শুনিয়া তাই ভুলেছি নিমেষে।
     পাতা পোরাবার
ছলে          
আজ সে যা-কিছু বলে
         
তাই-শুনে মন গলে, চোখে আসে জল—
     তারি লাগি কত
ব্যথা,           
কত মনোব্যাকুলতা,
         
দু-চারিটি তুচ্ছ কথা জীবনসম্বল।
 
     দিবা যেন
আলোহীনা           
এই দুটি কথা বিনা
         
‘তুমি ভালো আছ কি না’ ‘আমি ভালো আছি’।
     স্নেহ যেন নাম
ডেকে         
কাছে এসে যায় দেখে,
         
দুটি কথা দূর থেকে করে কাছাকাছি।
     দরশ পরশ
যত                    
সকল বন্ধন গত,
         
মাঝে ব্যবধান কত নদীগিরিপারে—
     স্মৃতি শুধু স্নেহ
বয়ে            
দুঁহু করস্পর্শ লয়ে
         
অক্ষরের মালা হয়ে বাঁধে দুজনারে।
 
     কই চিঠি! এল
নিশা,          
তিমিরে ডুবিল দিশা,
         
সারা দিবসের তৃষা রয়ে গেল মনে—
     অন্ধকার
নদীতীরে          
বেড়াতেছি ফিরে ফিরে,
         
প্রকৃতির শান্তি ধীরে পশিছে জীবনে।
     ক্রমে আঁখি
ছলছল্,              
দুটি ফোঁটা অশ্রুজল
         
ভিজায় কপোলতল, শুকায় বাতাসে—
     ক্রমে অশ্রু নাহি
বয়,               
ললাট শীতল হয়
         
রজনীর শান্তিময় শীতল নিশ্বাসে।
 
আকাশে অসংখ্য
তারা              
চিন্তাহারা ক্লান্তিহারা,
             
হৃদয় বিস্ময়ে সারা হেরি একদিঠি—
     আর যে আসে না
আসে              
মুক্ত এই মহাকাশে
             
প্রতি সন্ধ্যা পরকাশে অসীমের চিঠি।
     অনন্ত বারতা
বহে—              
অন্ধকার হতে কহে,
           
‘যে রহে যে নাহি রহে কেহ নহে একা—
     সীমাপরপারে
থাকি               
সেথা হতে সবে ডাকি
           
প্রতি রাত্রে লিখে রাখি জ্যোতিপত্রলেখা।’