কথা
মৃত্যুর প্রভাত চেয়ে মৌনী জপিছেন
ইষ্টনাম। রমণীর কটাক্ষ-ইঙ্গিতে
রক্ষী আসি খুলি দিল শৃঙ্খল চকিতে।
বিস্ময়বিহ্বল নেত্রে বন্দী নিরখিল
সেই শুভ্র সুকোমল কমল-উন্মীল
অপরূপ মুখ। কহিল গদ্গদস্বরে
‘বিকারের বিভীষিকা-রজনীর’পরে
করধৃতশুকতারা শুভ্র উষা-সম
কে তুমি উদিলে আসি কারাকক্ষে মম—
মুমূর্ষুর প্রাণরূপা, মুক্তিরূপা অয়ি,
নিষ্ঠুর নগরী-মাঝে লক্ষ্মী দয়াময়ী!’
‘আমি দয়াময়ী!’ রমণীর উচ্চহাসে
চকিতে উঠিল জাগি নবভয়ত্রাসে
ভয়ংকর কারাগার। হাসিতে হাসিতে
উন্মত্ত উৎকট হাস্য শোকাশ্রুরাশিতে
শতধা পড়িল ভাঙি। কাঁদিয়া কহিলা,
‘এ পুরীর পথমাঝে যত আছে শিলা
কঠিন শ্যামার মতো কেহ নাহি আর!’
এত বলি দৃঢ়বলে ধরি হস্ত তার
বজ্রসেনে লয়ে গেল কারার বাহিরে।
তখন জাগিছে উষা বরুণার তীরে
পূর্ব বনান্তরে। ঘাটে বাঁধা আছে তরী।
‘হে বিদেশী, এসো এসো, কহিল সুন্দরী
দাঁড়ায়ে নৌকার’পরে, ‘হে আমার প্রিয়,
শুধু এই কথা মোর স্মরণে রাখিয়ো—
তোমা-সাথে এক স্রোতে ভাসিলাম আমি
সকল বন্ধন টুটি হে হৃদয়স্বামী,
জীবনমরণপ্রভু!’ নৌকা দিল খুলি।
দুই তীরে বনে বনে গাহে পাখিগুলি
আনন্দ-উৎসব-গান। প্রেয়সীর মুখ