চিত্রা

                     অয়ি দীনহীনা,

অশ্রু-আঁখি দুঃখাতুরা জননী মলিনা,

অয়ি মর্ত্যভূমি। আজি বহুদিন পরে

কাঁদিয়া উঠেছে মোর চিত্ত তোর তরে।

যেমনি বিদায়দুঃখে শুষ্ক দুই চোখ

অশ্রুতে পুরিল, অমনি এ স্বর্গলোক

অলস কল্পনাপ্রায় কোথায় মিলালো

ছায়াচ্ছবি। তব নীলাকাশ, তব আলো,

তব জনপূর্ণ লোকালয়, সিন্ধুতীরে

সুদীর্ঘ বালুকাতট, নীল গিরিশিরে

শুভ্র হিমরেখা, তরুশ্রেণীর মাঝারে

নিঃশব্দ অরুণোদয়, শূন্য নদীপারে

অবনতমুখী সন্ধ্যা — বিন্দু-অশ্রুজলে

যত প্রতিবিম্ব যেন দর্পণের তলে

পড়েছে অসিয়া।

 

 

              হে জননী পুত্রহারা,

শেষ বিচ্ছেদের দিনে যে শোকাশ্রুধারা

চক্ষু হতে ঝরি পড়ি তব মাতৃস্তন

করেছিল অভিষিক্ত, আজি এতক্ষণ

সে অশ্রু শুকায়ে গেছে। তবু জানি মনে

যখনি ফিরিব পুন তব নিকেতনে

তখনি দুখানি বাহু ধরিবে আমায়,

বাজিবে মঙ্গলশঙ্খ, স্নেহের ছায়ায়

দুঃখে-সুখে-ভয়ে-ভরা প্রেমের সংসারে

তব গেহে, তব পুত্রকন্যার মাঝারে

আমারে লইবে চিরপরিচিতসম —

তার পরদিন হতে শিয়রেতে মম

সারাক্ষণ জাগি রবে কম্পমান প্রাণে,

শঙ্কিত অন্তরে, ঊর্ধ্বে দেবতার পানে

মেলিয়া করুণ দৃষ্টি, চিন্তিত সদাই

যাহারে পেয়েছি তারে কখন হারাই।