পলাতকা

             মনে হচ্ছে ময়নাপাখির খাঁচায়

    অদৃষ্ট তার দারুণ রঙ্গে ময়ূরটাকে নাচায় ;

       পদে পদে পুচ্ছে বাধে লোহার শলা,

         কোন্‌ কৃপণের রচনা এই নাট্যকলা।

কোথায় মুক্ত অরণ্যানী, কোথায় মত্ত বাদল-মেঘের ভেরী।

            এ কী বাঁধন রাখল আমায় ঘেরি।

 

 

           ঘুরে ঘুরে উমেদারির ব্যর্থ আশে

        শুকিয়ে মরি রোদ্দুরে আর উপবাসে।

          প্রাণটা হাঁপায়, মাথা ঘোরে,

        তক্তপোষে শুয়ে পড়ি ধপাস করে।

        হাতপাখাটার বাতাস খেতে খেতে

     হঠাৎ আমার চোখ পড়ে যায় উপরেতে —

     মরচে-পড়া গরাদে ওই, ভাঙা জানলাখানি,

বসে আছে পাশের বাড়ির কালো মেয়ে নন্দরানী।

মনে হয় যে, রোদের পরে বৃষ্টিভরা থমকে-যাওয়া মেঘে

       ক্লান্ত পরান জুড়িয়ে গেল কালো পরশ লেগে।

আমি যে ওর হৃদয়খানি চোখের ' পরে স্পষ্ট   দেখি আঁকা ;

          ও যেন জুঁইফুলের বাগান সন্ধ্যা-ছায়ায় ঢাকা ;

    একটুখানি চাঁদের রেখা কৃষ্ণপক্ষে স্তব্ধ নিশীথ রাতে

                   কালো জলের গহন কিনারাতে।

                   লাজুক ভীরু ঝরনাখানি ঝিরি ঝিরি

     কালো পাথর বেয়ে বেয়ে লুকিয়ে ঝরে ধীরি ধীরি।

                        রাত-জাগা এক পাখি,

মৃদু করুণ কাকুতি তার তারার মাঝে মিলায় থাকি থাকি।

          ও যেন কোন্‌ ভোরের স্বপন কান্নাভরা,

          ঘন ঘুমের নীলাঞ্চলের বাঁধন দিয়ে ধরা।

          রাখাল ছেলের সঙ্গে বসে বটের ছায়ে

     ছেলেবেলার বাঁশের বাঁশি বাজিয়েছিলেম গাঁয়ে।

                   সেই বাঁশিটির টান

     ছুটির দিনে হঠাৎ কেমন আকুল করল প্রাণ।