প্রজাপতির নির্বন্ধ
আছে। দেখুন, সেই খাতা সম্বন্ধে আর কোনো কথা উঠেছিল?

রসিক। অপরাধ করা মানবের ধর্ম আর ক্ষমা করা দেবীর– সে কথাটা আমি প্রসঙ্গক্রমে তুলেছিলেম–

‍বিপিন। তাতে কী বললেন?

রসিক। কিছু না বলে বিদ্যুতের মতো চলে গেলেন।

বিপিন। চলে গেলেন?

রসিক। কিন্তু সে বিদ্যুতে বজ্র ছিল না।

বিপিন। গর্জন?

রসিক। তাও ছিল না।

বিপিন। তবে?

রসিক। এক প্রান্তে কিম্বা অন্য প্রান্তে একটু হয়তো বর্ষণের আভাস ছিল।

বিপিন। সেটুকুর অর্থ?

রসিক। কী জানি মশায়! অর্থও থাকতে পারে অনর্থও থাকতে পারে।

বিপিন। রসিকবাবু, আপনি কী বলেন আমি কিছু বুঝতে পারি নে।

রসিক। কী করে বুঝবেন– ভারী শক্ত কথা।

শ্রীশ। (নিকটে আসিয়া) কী শক্ত কথা মশায়?

রসিক। এই বৃষ্টিবজ্রবিদ্যুতের কথা!

শ্রীশ। ওহে বিপিন, তার চেয়ে শক্ত কথা যদি শুনতে চাও তা হলে পূর্ণর কাছে যাও।

বিপিন। শক্ত কথা সম্বন্ধে আমার খুব বেশি শখ নেই ভাই!

শ্রীশ। যুদ্ধ করার চেয়ে সন্ধি করার বিদ্যেটা ঢের বেশি দুরূহ– সেটা তোমার আসে। দোহাই তোমার, পূর্ণকে একটু ঠাণ্ডা করে এসোগে। আমি বরঞ্চ ততক্ষণে রসিকবাবুর সঙ্গে বৃষ্টিবজ্রবিদ্যুতের আলোচনা করে নিই। (বিপিনের প্রস্থান) রসিকবাবু, ঐ-যে সেদিন আপনি যাঁর নাম নৃপবালা বললেন, তিনি– তিনি– তাঁর সম্বন্ধে বিস্তারিত করে কিছু বলুন। সেদিন চকিতের মধ্যে তাঁর মুখে এমন একটি স্নিগ্ধ ভাব দেখেছি, তাঁর সম্বন্ধে কৌতূহল কিছুতেই থামাতে পারছি নে।

রসিক। বিস্তারিত করে বললে কৌতূহল আরো বেড়ে যাবে। এরকম কৌতূহল ‘হবিষা কৃষ্ণবর্ত্মেব ভূয় এবাভিবর্ধতে’। আমি তো তাঁকে এতকাল ধরে জেনে আসছি কিন্তু সেই কোমল হৃদয়ের স্নিগ্ধ মধুর ভাবটি আমার কাছে ‘ক্ষণে ক্ষণে তন্নবতামুপৈতি’।

শ্রীশ। আচ্ছা, তিনি– আমি সেই নৃপবালার কথা জিজ্ঞাসা করছি–

রসিক। সে আমি বেশ বুঝতেই পারছি।

শ্রীশ। তা, তিনি– কী আর প্রশ্ন করব? তাঁর সম্বন্ধে যা-হয়-কিছু বলুন-না। কাল কী বললেন, আজ সকালে কী করলেন, যত সামান্য হোক আপনি বলুন আমি শুনি।

রসিক। (শ্রীশের হাত ধরিয়া)বড়ো খুশি হলুম শ্রীশবাবু, আপনি যথার্থ ভাবুক বটেন– আপনি তাঁকে কেবল চকিতের মধ্যে দেখে এটুকু কী করে ধরতে পারলেন যে তাঁর সম্বন্ধে তুচ্ছ কিছুই নেই। তিনি যদি বলেন, রসিকদা, ঐ কেরোসিনের বাতিটা একটুখানি উসকে দাও তো, আমার মনে হয় যেন একটা নতুন কথা শুনলেম– আদি কবির প্রথম অনুষ্টুপ ছন্দের মতো। কী বলব শ্রীশবাবু, আপনি শুনলে হয়তো হাসবেন, সেদিন ঘরে ঢুকে দেখি নৃপবালা ছুঁচের মুখে সুতো পরাচ্ছেন, কোলের উপর বালিশের ওয়াড়