প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
দাদামশায়, নীলমণিবাবুকে তোমার এত কেন ভালো লাগে আমি তো বুঝতে পারি নে।
এই প্রশ্নটা পৃথিবীর সবচেয়ে শক্ত প্রশ্ন, এর ঠিক উত্তর ক’জন লোকে দিতে পারে।
তোমার হেঁয়ালি রাখো। অমন এলোমেলো আলুথালু অগোছালো লোককে মেয়েরা দেখতে পারে না।
ওটা তো হল সার্টিফিকেট, অর্থাৎ লোকটা খাঁটি পুরুষমানুষ।
জান না তুমি, উনি কথায় কথায় কী রকম হুলুস্থূল বাধিয়ে তোলেন। হাতের কাছে যেটা আছে সেটা ওঁর হাতেই ঠেকে না। সেটা উনি খুঁজে বেড়ান পাড়ায় পাড়ায়।
ভক্তি হচ্ছে তো লোকটার উপরে।
কেন শুনি।
হাতের কাছের জিনিসটাই যে সবচেয়ে দূরের সে ক’জন লোক জানে, অথচ নিশ্চিন্ত হয়ে থাকে।
একটা দৃষ্টান্ত দেখাও দেখি।
যেমন তুমি।
আমাকে তুমি খুঁজে পাও নি বুঝি?
খুঁজে পেলে যে রস মারা যেত, যত খুঁজছি তত অবাক হচ্ছি।
আবার তোমার হেঁয়ালি।
উপায় নেই। দিদি, আমার কাছে আজও তুমি সহজ নও, নিত্যি নূতন।
কুসমি দাদামশায়ের গলা জড়িয়ে বললে, দাদামশায় এটা কিন্তু শোনাচ্ছে ভালো। কিন্তু, ও কথা থাক্। নীলুবাবুর বাড়িতে কাল কী রকম হুলুস্থূল বেধেছিল সে খবরটা বিধুমামার কাছে শোনো-না।
কী গো মামা, কী হয়েছিল শুনি।
অদ্ভুত— বিধুমামা বললেন, পাড়ায় রব উঠল নীলুবাবুর কলমটা পাওয়া যাচ্ছে না; খোঁজ পড়ে গেল মশারির চালে পর্যন্ত। ডেকে পাঠালে পাড়ার মাধুবাবুকে।
বললে, ওহে মাধু, আমার কলমটা?
মাধুবাবু বললেন, জানলে খবর দিতুম।
ধোবাকে ডাক পড়ল, ডাক পড়ল হারু নাপিতকে। বাড়িসুদ্ধ সবাই যখন হাল ছেড়ে দিয়েছে তখন তার ভাগ্নে এসে বললে, কলম যে তোমার কানেই আছে গোঁজা।
যখন কোনো সন্দেহ রইল না তখন ভাগ্নের গালে এক চড় মেরে বললে, বোকা কোথাকার, যে কলমটা পাওয়া যাচ্ছে না সেটাই খুঁজছি।
রান্নাঘর থেকে স্ত্রী এল বেরিয়ে; বললে, বাড়ি মাথায় করেছ যে।
নীলু বললে, যে কলমটা চাই ঠিক সেই কলমটা খুঁজে পাচ্ছি না।