ডাকঘর

প্রহরী। হবে বৈকি!

অমল। কিন্তু কবিরাজ যে আমাকে বাইরে যেতে বারণ করেছে।

প্রহরী। কোন্‌‌‍দিন কবিরাজই হয়তো স্বয়ং হাতে ধরে নিয়ে যাবেন!

অমল। না না, তুমি তাকে জান না, সে কেবলই ধরে রেখে দেয়।

প্রহরী। তার চেয়ে ভালো কবিরাজ যিনি আছেন, তিনি এসে ছেড়ে দিয়ে যান।

অমল। আমার সেই ভালো কবিরাজ কবে আসবেন? আমার যে আর বসে থাকতে ভালো লাগছে না।

প্রহরী। অমন কথা বলতে নেই বাবা!

অমল। না —আমি তো বসেই আছি —যেখানে আমাকে বসিয়ে রেখেছে সেখান থেকে আমি তো বেরোই নে —কিন্তু তোমার ঐ ঘণ্টা বাজে ঢং ঢং ঢং —আর আমার মন-কেমন করে। আচ্ছা প্রহরী!

প্রহরী। কী বাবা?

অমল। আচ্ছা, ঐ-যে রাস্তার ওপারের বড়ো বাড়িতে নিশেন উড়িয়ে দিয়েছে, আর ওখানে সব লোকজন কেবলই আসছে যাচ্ছে —ওখানে কী হয়েছে?

প্রহরী। ওখানে নতুন ডাকঘর বসেছে।

অমল। ডাকঘর? কার ডাকঘর?

প্রহরী। ডাকঘর আর কার হবে? রাজার ডাকঘর। —এ ছেলেটি ভারি মজার।

অমল। রাজার ডাকঘরে রাজার কাছ থেকে সব চিঠি আসে?

প্রহরী। আসে বৈকি। দেখো, একদিন তোমার নামেও চিঠি আসবে।

অমল। আমার নামেও চিঠি আসবে? আমি যে ছেলেমানুষ।

প্রহরী। ছেলেমানুষকে রাজা এতটুকু-টুকু ছোট্ট ছোট্ট চিঠি লেখেন।

অমল। বেশ হবে। আমি কবে চিঠি পাব? আমাকেও তিনি চিঠি লিখবেন তুমি কেমন করে জানলে?

প্রহরী। তা নইলে তিনি ঠিক তোমার এই খোলা জানলাটার সামনেই অতবড়ো একটা সোনালি রঙের নিশেন উড়িয়ে ডাকঘর খুলতে যাবেন কেন? —ছেলেটাকে আমার বেশ লাগছে।

অমল। আচ্ছা, রাজার কাছ থেকে আমার চিঠি এলে আমাকে কে এনে দেবে?

প্রহরী। রাজার যে অনেক ডাক-হরকরা আছে —দেখ নি বুকে গোল গোল সোনার তক্‌মা প’রে তারা ঘুরে বেড়ায়।

অমল। আচ্ছা, কোথায় তারা ঘোরে?

প্রহরী। ঘরে ঘরে, দেশে দেশে। —এর প্রশ্ন শুনলে হাসি পায়।

অমল। বড়ো হলে আমি রাজার ডাক-হরকরা হব।

প্রহরী। হা হা হা হা! ডাক-হরকরা! সে ভারি মস্ত কাজ! রোদ নেই বৃষ্টি নেই, গরিব নেই বড়োমানুষ নেই, সকলের ঘরে ঘরে চিঠি বিলি করে বেড়ানো —সে খুব জবর কাজ!

অমল। তুমি হাসছ কেন! আমার ঐ কাজটাই সকলের চেয়ে ভালো লাগছে। না না, তোমার কাজও খুব ভালো –দুপুরবেলা যখন রোদ্দুর ঝাঁঝাঁ করে, তখন ঘণ্টা বাজে ঢং ঢং ঢং —আবার এক-এক দিন রাত্রে হঠাৎ বিছানায় জেগে উঠে দেখি ঘরের প্রদীপ নিবে গেছে, বাইরের কোন্‌ অন্ধকারের ভিতর দিয়ে ঘণ্টা বাজছে ঢং ঢং ঢং।