ডাকঘর
অমল শয্যাগত

অমল। পিসেমশায়, আজ আর আমার সেই জানলার কাছেও যেতে পারব না? কবিরাজ বারণ করেছে?

মাধব দত্ত। হাঁ বাবা। সেখানে রোজ রোজ বসে থেকেই তো তোমার ব্যামো বেড়ে গেছে।

অমল। না পিসেমশায়, না —আমার ব্যামোর কথা আমি কিছুই জানি নে কিন্তু সেখানে থাকলে আমি খুব ভালো থাকি।

মাধব দত্ত। সেখানে বসে বসে তুমি এই শহরের যত রাজ্যের ছেলেবুড়ো সকলের সঙ্গেই ভাব করে নিয়েছ –আমার দরজার কাছে রোজ যেন একটা মস্ত মেলা বসে যায় —এতেও কি কখনো শরীর টেকে! দেখো দেখি, আজ তোমার মুখখানা কী রকম ফ্যাকাশে হয়ে গেছে!

অমল। পিসেমশায়, আমার সেই ফকির হয়তো আজ আমাকে জানলার কাছে না দেখতে পেয়ে চলে যাবে।

মাধব দত্ত। তোমার আবার ফকির কে?

অমল। সেই যে রোজ আমার কাছে এসে নানা দেশবিদেশের কথা বলে যায় —শুনতে আমার ভারি ভালো লাগে।

মাধব দত্ত। কই আমি তো কোনো ফকিরকে জানি নে।

অমল। এই ঠিক তার আসবার সময় হয়েছে —তোমার পায়ে পড়ি, তুমি তাকে একবার বলে এসো-না, সে যেন আমার ঘরে এসে একবার বসে।

ফকিরবেশে ঠাকুরদার প্রবেশ

অমল। এই-যে, এই-যে ফকির —এসো আমার বিছানায় এসে বসো।

মাধব দত্ত।এ কী।এ যে –

ঠাকুরদা। (চোখ ঠারিয়া) আমি ফকির।

মাধব দত্ত। তুমি যে কী নও তা তো ভেবে পাই নে!

অমল। এবারে তুমি কোথায় গিয়েছিলে ফকির?

ফকির। আমি ক্রৌঞ্চদ্বীপে গিয়েছিলুম —সেইখান থেকেই এইমাত্র আসছি।

মাধব দত্ত। ক্রৌঞ্চদ্বীপে?

ফকির। এতে আশ্চর্য হও কেন? তোমাদের মতো আমাকে পেয়েছ? আমার তো যেতে কোনো খরচ নেই। আমি যেখানে খুশি যেতে পারি।

অমল। (হাততালি দিয়া) তোমার ভারি মজা। আমি যখন ভালো হব তখন তুমি আমাকে চেলা করে নেবে বলেছিলে, মনে আছে ফকির?

ঠাকুরদা। খুব মনে আছে। বেড়াবার এমন সব মন্ত্র শিখিয়ে দেব যে সমুদ্রে পাহাড়ে অরণ্যে কোথাও কিছুতে বাধা দিতে পারবে না।

মাধব দত্ত। এ-সব কী পাগলের মতো কথা হচ্ছে তোমাদের!

ঠাকুরদা। বাবা অমল, পাহাড়-পর্বত-সমুদ্রকে ভয় করি নে —কিন্তু তোমার এই পিসেটির সঙ্গে যদি আবার কবিরাজ এসে