প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
অমল। আমি জানি নে। আমি তো কিচ্ছু পড়ি নি, তাই আমি জানি নে আমার কী হয়েছে। দইওআলা, তুমি কোথা থেকে আসছ?
দইওআলা। আমাদের গ্রাম থেকে আসছি।
অমল। তোমাদের গ্রাম? অনে—ক দূরে তোমাদের গ্রাম?
দইওআলা। আমাদের গ্রাম সেই পাঁচমুড়া পাহাড়ের তলায়। শামলী নদীর ধারে।
অমল। পাঁচমুড়া পাহাড় —শামলী নদী —কী জানি,হয়তো তোমাদের গ্রাম দেখেছি —কবে সে আমার মনে পড়ে না।
দইওআলা। তুমি দেখেছ? পাহাড়তলায় কোনোদিন গিয়েছিলে নাকি?
অমল। না, কোনোদিন যাই নি। কিন্তু আমার মনে হয় যেন আমি দেখেছি। অনেক পুরোনোকালের খুব বড়ো বড়ো গাছের তলায় তোমাদের গ্রাম —একটি লাল রঙের রাস্তার ধারে। না?
দইওআলা। ঠিক বলেছ বাবা।
অমল। সেখানে পাহাড়ের গায়ে সব গোরু চরে বেড়াচ্ছে।
দইওআলা। কী আশ্চর্য! ঠিক বলছ। আমাদের গ্রামে গোরু চরে বৈকি, খুব চরে।
অমল। মেয়েরা সব নদী থেকে জল তুলে মাথায় কলসী করে নিয়ে যায় – তাদের লাল শাড়ি পরা।
দইওআলা। বা! বা! ঠিক কথা। আমাদের সব গয়লাপাড়ার মেয়েরা নদী থেকে জল তুলে তো নিয়ে যায়ই। তবে কিনা তারা সবাই যে লাল শাড়ি পরে তা নয় —কিন্তু বাবা, তুমি নিশ্চয় কোনোদিন সেখানে বেড়াতে গিয়েছিলে!
অমল। সত্যি বলছি দইওআলা, আমি একদিনও যাই নি। কবিরাজ যেদিন আমাকে বাইরে যেতে বলবে সেদিন তুমি নিয়ে যাবে তোমাদের গ্রামে?
দইওআলা। যাব বই কি বাবা, খুব নিয়ে যাব!
অমল। আমাকে তোমার মতো ঐরকম দই বেচতে শিখিয়ে দিয়ো। ঐরকম বাঁক কাঁধে নিয়ে —ঐরকম খুব দূরের রাস্তা দিয়ে।
দইওআলা। মরে যাই! দই বেচতে যাবে কেন বাবা? এত এত পুঁথি পড়ে তুমি পণ্ডিত হয়ে উঠবে।
অমল। না, না, আমি কক্খনো পণ্ডিত হব না। আমি তোমাদের রাঙা রাস্তার ধারে তোমাদের বুড়ো বটের তলায় গোয়ালপাড়া থেকে দই নিয়ে এসে দূরে দূরে গ্রামে গ্রামে বেচে বেচে বেড়াব। কী রকম করে তুমি বল, দই, দই, দই —ভালো দই। আমাকে সুরটা শিখিয়ে দাও।
দইওআলা। হায় পোড়াকপাল! এ সুরও কি শেখবার সুর!
অমল। না, না, ও আমার শুনতে খুব ভালো লাগে। আকাশের খুব শেষ থেকে যেমন পাখির ডাক শুনলে মন উদাস হয়ে যায় —তেমনি ঐ রাস্তার মোড় থেকে ঐ গাছের সারির মধ্যে দিয়ে যখন তোমার ডাক আসছিল, আমার মনে হচ্ছিল —কী জানি কী মনে হচ্ছিল!
দইওআলা। বাবা, এক ভাঁড় দুই তুমি খাও।
অমল। আমার তো পয়সা নেই।
দইওআলা। না না না না —পয়সার কথা বোলো না। তুমি আমার দই একটু খেলে আমি কত খুশি হব।
অমল। তোমার কি অনেক দেরি হয়ে গেল?