বৈকুন্ঠের খাতা
তৃতীয় দৃশ্য
কেদার

কেদার। শ্যালীর বিবাহ তো নির্বিঘ্নে হয়ে গেছে। কিন্তু বৈকুণ্ঠ থাকতে এখানে বাস করে সুখ হচ্ছে না। উপদ্রব তো করা যাচ্ছে, কিন্তু বুড়ো নড়ে না।

বৈকুণ্ঠের প্রবেশ

বৈকুণ্ঠ। এই-যে কেদারবাবু, আপনাকে শুকনো দেখাচ্ছে যে। অসুখ করে নি তো?

কেদার। ওর নাম কী, ডাক্তারে সকল রকম মানসিক পরিশ্রম নিষেধ করেছে—

বৈকুণ্ঠ। আহা, কী দুঃখের বিষয়! আপনি এখানেই কিছুদিন বিশ্রাম করুন।

কেদার। সেইরকমই তো স্থির করেছি।

বৈকুণ্ঠ। তা দেখুন, বেণীবাবুকে—

কেদার। বেণীবাবু নয়, বিপিনবাবুর কথা বলছেন বোধ হয়—

বৈকুণ্ঠ। হাঁ হাঁ, বিপিনবাবুই বটে, ঐ-যে তিনি ছোটোবউমার কে হন—

কেদার। খুড়ো হন—

বৈকুণ্ঠ। খুড়োই হবেন। তা, তাঁকে আমার এই ঘরে থাকতে দিয়েছেন, সে কি তাঁর—

কেদার। না, ওর নাম কী, তাঁর কোনো অসুবিধে হয় নি, তিনি বেশ আছেন—

বৈকুণ্ঠ। জানেন তো কেদারবাবু, আমি এই ঘরেই লিখে থাকি—

কেদার। তা বেশ তো, আপনি লিখবেন, ওর নাম কী, আপনি লিখবেন—তাতে বিপিনবাবুর কোনো আপত্তি নেই।

বৈকুণ্ঠ। না, আপত্তি কেন করবেন, লোকটি বেশ—কিন্তু তাঁর একটি অভ্যাস আছে, তিনি বিছানায় শুয়ে শুয়ে প্রায় সর্বদাই গুন গুন করে গান করেন, তাতে লেখবার সময়—

কেদার। কী বলে, সেজন্যে ভাবনা কী। আপনি তাঁকে ডেকেই বলুন-না—

বৈকুণ্ঠ। না না না না। সে থাক্‌। তিনি ভদ্রলোক—

কেদার। ওর নাম কী, আমিই তাঁকে ডেকে খুব ভর্ৎসনা করে দিচ্ছি—

বৈকুণ্ঠ। না না কেদারবাবু, সে করবেন না—লেখার সময় গান তো আমার ভালোই লাগে। কিন্তু আমি ভাবছিলুম, হয়তো আর-কোনো ঘরে বেণীবাবু একলা থাকলে বেশ মন খুলে গাইতে পারেন।

কেদার। ওর নাম কী, ঠিক উলটো। বিপিনবাবুর একটি লোক সর্বদাই চাই—

বৈকুণ্ঠ। তা দেখেছি—বড়ো মিশুক—হয় গান নয় গল্প করছেনই—তা আমি তাঁর কথা মন দিয়ে শুনে থাকি।—কিন্তু দেখো কেদারবাবু, কিছু মনে কোরো না ভাই—একটা বড়ো গুরুতর বেদনা পেয়েছি, সে কথা তোমাকে না বলে থাকতে পারছি নে। ভাই, আমার সেই স্বরসূত্রসার পুঁথিখানি কে নিয়েছে।

কেদার। কোথায় ছিল বলুন দেখি।

বৈকুণ্ঠ। সে তো আপনি জানেন। এই ঘরে ঐ শেলফের উপর ছিল। আজকাল এ ঘরে সর্বদা লোক আনাগোনা করছেন, আমি কাউকে কিছুই বলতে পারছি নে—কিন্তু শেলফের ঐ জায়গাটা শূন্য দেখছি আর মনে হচ্ছে আমার বুকের কখানা পাঁজর খালি হয়ে