বৈকুন্ঠের খাতা

কেদার। তা, কোনো কথাটিই বাদ দেওয়া হয় নি— দিব্যি হয়েছে— তবে আজ উঠি।

অবিনাশ। কিন্তু ‘পদতলে’ কথাটা কি ঠিক খাটল— ওটা কিনা আংটি—

কেদার। কী বলে ভালো, তা ‘করতলেই’ লিখে দাও-না!

অবিনাশ। কিন্তু করতলে পূজোপহারটা কেমন শোনাচ্ছে!

কেদার। তা, নাহয় পূজোপহার নাই হল, ওর নাম কী—

অবিনাশ। শুধু ‘উপহার’ লিখলে বড়ো ফাঁকা শোনায়, ‘পূজোপহারই’ থাক্‌—

কেদার। তা থাক্‌-না—

অবিনাশ। কিন্তু তা হলে ‘করতলে’টা কী করা যায়—

কেদার। ওটা পদতলেই করে দাও-না—ওর নাম কী, তাতে ক্ষতি কী। আমি তা হলে উঠি।

অবিনাশ। একটু রোসো-না। আংটি সম্বন্ধে পদতলে কথাটা খাপছাড়া শোনাচ্ছে।

কেদার। খাপছাড়া কেন হবে! তুমি তো পদতলে দিয়ে খালাস, তার পরে ওর নাম কী, তিনি করতলে তুলে নেবেন, কী বলে, যদি স্বয়ং না নেন তো অন্য লোক আছে।

অবিনাশ। আচ্ছা, পূজোপহার না লিখে যদি প্রণয়োপহার লেখা যায়।

কেদার। সেটা যদি খুব চট করে লেখা যায় তো সেইটেই ভালো।

অবিনাশ। কিন্তু রোসো, একটু ভেবে দেখি।

ঈশানের প্রবেশ

ঈশান। খাবার ঠাণ্ডা হয়ে এল যে।

অবিনাশ। আচ্ছা, সে হবে এখন, তুই যা।

ঈশান। দিদিঠাকরুন বসে আছে—

অবিনাশ। আচ্ছা আচ্ছা, তুই এখন পালা—

ঈশান। (কেদারের প্রতি) বড়োবাবুর তো আহারনিদ্রা বন্ধ, আবার ছোটবাবুকেও খেপিয়ে তুলেছ?

কেদার। ভাই ঈশেন, যদিচ আমার নিমক খাও না, তবু, ওর নাম কী, আমার কথাটাও একবার ভেবে দেখো। তোমার বড়োবাবু খুব বিস্তারিত করে লিখে থাকেন আর তোমার ছোটবাবু, কী বলে, অত্যন্ত সংক্ষেপেই লেখেন, কিন্তু আমার কপালক্রমে দুইই সমান হয়ে ওঠে।—অবিনাশ, তোমার খাবার এসেছে, ওর নাম কী, আমি উঠি।

অবিনাশ। বিলক্ষণ! তুমিও খেয়ে যাও-না। ঈশেন, বাবুর জন্যে খাবার ঠিক কর্।

ঈশান। সময়মত বল না, এখন আমি খাবার ঠিক করি কোত্থেকে?

অবিনাশ। তোর মাথা থেকে! বেটা ভূত!

ঈশান। এও যে ঠিক বড়োবাবুর মতো হয়ে এল, আমাকে আর টিকতে দিলে না।

[ প্রস্থান
অবিনাশ। এখানে ‘প্রণয়োপহার’ লিখলে ‘দেবী’ কথাটা বদলাতে হয়। দেবীর সঙ্গে প্রণয় হবে কী করে।

কেদার। কেন হবে না! তা হলে দেবতাগুলো, ওর নাম কী, বাঁচে কী করে? ভাই অবিনাশ, স্ত্রীজাতি স্বর্গে মর্ত্যে পাতালে