অচলায়তন
আলিঙ্গন

আচার্য। সূতসোম, গুরু তো শীঘ্রই আসছেন, এখন তুমি সেখান থেকে চলে এলে কী করে।

উপাচার্য। সেইজন্যেই চলে এলুম। গুরু আসছেন, তুমি নেই! আর মহাপঞ্চক এসে গুরুকে বরণ করে নেবে—এও দাঁড়িয়ে থেকে দেখতে হবে। ওই শাস্ত্রের কীটটা গুরুকে আহ্বান করে আনবার যোগ্য এমন কথা যদি স্বয়ং মহামহর্ষি জলধরগর্জিতঘোষ-সুস্বরনক্ষত্রশঙ্কুসুমিত এসেও বলেন তবু আমি মানতে পারব না।

পঞ্চক। আঃ দেখতে দেখতে কী মেঘ করে এল। শুনছ আচার্যদেব, বজ্রের পর বজ্র! আকাশকে একেবারে দিকে দিকে দগ্ধ করে দিলে যে!

আচার্য। ঐ-যে নেমে এল বৃষ্টি—পৃথিবীর কতদিনের পথ-চাওয়া বৃষ্টি—অরণ্যের কত রাতের স্বপ্নদেখা বৃষ্টি।

পঞ্চক। মিটল এবার মাটির তৃষ্ণা—এই যে কালো মাটি—এই যে সকলের পায়ের নিচেকার মাটি।

ডালিতে কেয়াফুল কদম্বফুল লইয়া বাদ্যসহ দর্ভকদলের প্রবেশ

আচার্য। বাবা, তোমাদের এ কী সমারোহ!আজ এ কী কাণ্ড!

প্রথম দর্ভক। বাবাঠাকুর, আজ তোমাদের নিয়েই সমারোহ। কখনো পাই নে, আজ পেয়েছি।

দ্বিতীয় দর্ভক। আমরা তো শাস্ত্র কিছুই জানি নে—তোমাদের দেবতা আমাদের ঘরে আসে না।

তৃতীয় দর্ভক। কিন্তু আজ দেবতা কী মনে করে অতিথি হয়ে এই অধমদের ঘরে এসেছেন।

প্রথম দর্ভক। তাই আমাদের যা আছে তাই দিয়ে তোমাদের সেবা করে নেব।

দ্বিতীয় দর্ভক। আমাদের মন্ত্র নেই বলে আমরা শুধু কেবল গান গাই।

মাদল বাজাইয়া নৃত্যগীত

উতল ধারা বাদল ঝড়ে,

সকল বেলা একা ঘরে।

সজল হাওয়া বহে বেগে,

পাগল নদী উঠে জেগে,

আকাশ ঘেরে কাজল মেঘে,

তমালবনে আঁধার করে।

ওগো বঁধু দিনের শেষে

এলে তুমি কেমন বেশে।

আঁচল দিয়ে শুকাব জল

মুছাব পা আকুল কেশে।

নিবিড় হবে তিমির রাতি,

জ্বেলে দেব প্রেমের বাতি,

পরানখানি দিব পাতি

চরণ রেখো তাহার ’পরে।