অচলায়তন
মূল্যের মানুষ সে তোরা খবর পাস নি বলে এখনো আমার হাসিকে ভয় করিস। কিছু ভাবিস নে-নির্ভয়ে শুনিয়ে দে।

প্রথম দর্ভক। আচ্ছা ভাই আয় তবে—গান ধর।

গান

ও অকূলের কূল, ও অগতির গতি,

ও অনাথের নাথ, ও পতিতের পতি!

ও নয়নের আলো, ও রসনার মধু,

ও রতনের হার, ও পরানের বঁধূ!

ও অপরূপ রূপ, ও মনোহর কথা,

ও চরমের সুখ, ও মরমের ব্যথা!

ও ভিখারির ধন, ও অবলার বোল –

ও জনমের দোলা, ও মরণের কোল!

পঞ্চক। দে ভাই, আমার মন্ত্রতন্ত্র সব ভুলিয়ে দে, আমার বিদ্যাসাধ্যি সব কেড়ে নে, দে আমাকে তোদের ঐ গান শিখিয়ে দে।
প্রথম দর্ভক। আমাদের গান?

পঞ্চক। হাঁ রে হাঁ, ঐ অধমের গান, অক্ষমের কান্না। তোদের এই মূর্খের বিদ্যা এই কাঙালের সম্বল খুঁজেই তো আমার পড়াশুনা কিছু হল না, আমার ক্রিয়াকর্ম সমস্ত নিষ্ফল হয়ে গেল! ও ভাই, আর-একটা শোনা—অনেক দিনকার তৃষ্ণা অল্পে মেটে না।

দর্ভকদলের গান
আমরা     তারেই জানি তারেই জানি সাথের সাথি।

তারেই করি টানাটানি দিবারাতি।

        সঙ্গে তারি চরাই ধেনু,

            বাজাই বেণু,

তারি লাগি বটের ছায়ায় আসন পাতি।

        তারে হালের মাঝি করি

            চালাই তরী,

ঝড়ের বেলায় ঢেউয়ের খেলায় মাতামাতি।

        সারাদিনের কাজ ফুরালে

            সন্ধ্যাকালে

তাহারি পথ চেয়ে ঘরে জ্বালাই বাতি।


আচার্যের প্রবেশ

আচার্য। সার্থক হল আমার নির্বাসন।