লেখার নমুনা
করি! তুমি যে ভাই, সভ্য, তুমি কী করিয়া বুঝিবে কেন করি! তুমি যে ভাই, নবসভ্যতার নূতন বিদ্যালয়ে নূতন শিক্ষা লাভ করিয়া নূতন তানে নূতন গান ধরিয়াছ, নূতন রসে নূতন মজিয়া নূতন ভাবে নূতন ভোর হইয়াছ, তুমি কী করিয়া বুঝিবে কেন করি! তুমি যে এ কথা কখনো কিছু শোন নাই এবং আজ সম্পূর্ণ ভুলিয়া গিয়াছ, তুমি যে এ কথা কখনো কিছু বোঝ নাই এবং আজ একেবারেই বোঝ না, তুমি কী করিয়া বুঝিবে কেন করি! তবু জিজ্ঞাসা করিবে কেন করি? আমি যে ভাই, তোমাদের মিল্‌ পড়ি নাই, তোমাদের স্পেন্সর পড়ি নাই, তোমাদের ডারুয়িন পড়ি নাই ; আমি যে ভাই, তোমাদের হক্‌স্‌লি এবং টিণ্ড্যাল, রাস্কিন এবং কার্লাইল পড়ি নাই এবং পড়িয়া বুঝিতে পারি নাই ; আমি যে ভাই, কেবলমাত্র ষড়্‌দর্শন এবং অষ্টাঙ্গ বেদ, সংহিতা এবং পুরাণ, আগম এবং নিগম, উপক্রমণিকা এবং ঋজুপাঠ প্রথম-ভাগ পড়িয়াছি–ঐ-সকল গ্রন্থ এই পতিত ভারতে আমি ছাড়া আর যে কেহ পড়ে নাই এবং বুঝে নাই ভাই। তবু আবার জিজ্ঞাসা করিবে কেন করি! প্রাণের ভাইসকল, আমি যে পাগল, বাতুল, উন্মাদ, বায়ুগ্রস্ত, আমার মাথার ঠিক নাই, বুদ্ধির স্থিরতা নাই, চিত্ত উদ্‌ভ্রান্ত!

ভাই বাঙালি, এখন বুঝিলে কি, কেন করি, অবোধ অশ্রু কেন পড়ে, পোড়া চোখের জল কেন বারণ মানে না, কেন মিছে অরণ্যে রোদন, অস্থানে ক্রন্দন করিয়া মরি! নীরব হৃদয়ের জ্বালা ব্যক্ত হইল কি, এই ভস্মীভূত প্রাণের শিখা দেখিতে পাইলে কি, শুষ্ক অশ্রুধারা দুই কপোল বাহিয়া কি প্রবাহিত হইল? যে ধ্বনি কখনো শোন নাই তাহার প্রতিধ্বনি শুনিলে কি, যে আশা কখনো হৃদয়ে স্থান দাও নাই তাহার নৈরাশ্য তিলমাত্র অনুভব করিলে কি, যাহা বুঝাইতে গেলে বুঝানো যায় না এবং যাহা বুঝিতে চেষ্টা করিলে বুঝা উত্তরোত্তর অসাধ্য হইয়া উঠে তাহা কি আজ তোমাদের এই ঊনবিংশ শতাব্দীর সভ্যতারুদ্ধ বধির কর্ণকুহরে প্রবেশ করিল। –

সম্পাদক মহাশয়, আজ এই পর্যন্ত প্রকাশ করা গেল। কারণ ইহার পরের প্যারাগ্রাফেই আমাদের লেখক আরম্ভ করিয়াছেন, ‘ যদি না করিয়া থাকে তবে আমি ক্ষান্ত হইলাম, নীরব হইলাম, তবে আমি মুখ বন্ধ করিলাম, তবে আমি আর একটি কথাও কহিব না–না, একটিও না। ' এই বলিয়া কেন কথা কহিবেন না, শ্মশানক্ষেত্রে কথা বলিলেই বা কিরূপ ফল হয় এবং সমাধিক্ষেত্রে কথা বলিলেই বা কিরূপ নিষ্ফল হয়, এবং কথা বলিলেই বা কিরূপ হৃদয় বিদীর্ণ হয় এবং হৃদয় বিদীর্ণ হইলেই বা কিরূপ কথা বাহির হইতে থাকে, তাহাই ভাই বাঙালিকে পুনরায় বুঝাইতে প্রবৃত্ত হইয়াছেন এবং কিছুতেই কৃতকার্য হইতে পারিতেছেন না। এই অংশটি এত দীর্ঘ যে, আপনার কাগজে স্থান হইবে না। পাঠকদিগকে আশ্বাস দেওয়া যাইতেছে, প্রবন্ধটি অবিলম্বে পুস্তকাকারে প্রকাশিত হইবে। মূল্য ৫৸৹ মাত্র, কিন্তু যাঁহারা ডাক-মাশুল-স্বরূপে উক্ত ৫৪০ পাঠাইবেন তাঁহাদিগকে বিনা মূল্যে গ্রন্থ উপহার দেওয়া যাইবে।

–সাহিত্য এজেন্সির কার্যাধ্যক্ষ