বাংলা বহুবচন

সংস্কৃত ভাষায় সাত বিভক্তি প্রাকৃতে অনেকটা সংক্ষিপ্ত হইয়া আসিয়াছে। প্রাকৃতে চতুর্থী বিভক্তি নাই বলিলেই হয় এবং ষষ্ঠীর দ্বারাই প্রথমা ব্যতীত অন্য সকল বিভক্তির কার্য সারিয়া লওয়া যাইতে পারে।

আধুনিক ভারতবর্ষীয় আর্যভাষাগুলিতে প্রাকৃতের এই নিয়মের প্রভাব দেখা যায়।

সংস্কৃত ষষ্ঠীর স্য বিভক্তির স্থানে প্রাকৃতে শ্‌ শ হ হো হে হি বিভক্তি পাওয়া যায়। আধুনিক ভাষাগুলিতে এই বিভক্তির অনুসরণ করা যাক।

চহুবানহ পাস –চাঁদ : চহুবানের নিকট।
সংসারহি পারা –কবীর : সংসারের পার।
মুনিহিঁ দিখাঈ –তুলসীদাস : মুনিকে দেখাইলেন।
যুবরাজপদ রামহি দেহ –তুলসীদাস : যুবরাজপদ রামকে দেও।
কহ্যৌ সম খান্‌ততারহ –চাঁদ : তিনি খান্‌তাতারকে কহিলেন।
তত্তারহ উপরহ –চাঁদ : তাতারের উপরে।
আদিহিতে সব কথা সুনাঈ –তুলসীদাস : আদি হইতে তিনি সকল কথা শুনাইলেন।

উক্ত উদাহরণ হইতে দেখা যাইতেছে ষষ্ঠী বিভক্তির চিহ্ন প্রায় সকল বিভক্তির কাজ সারিতেছে।

বাংলায় কী হয় দেখা যাক। বাংলায় যে-সকল বিভক্তিতে ‘এ’ যোগ হয় তাহার ইতিহাস প্রাকৃত হি-র মধ্যে পাওয়া যায়। সংস্কৃত–গৃহস্য, অপভ্রংশ প্রাকৃত–ঘরহে, বাংলা–ঘরে। সংস্কৃত–তাম্রকস্য, অপভ্রংশ প্রাকৃত–তম্বঅহে, বাংলায়–তাঁবার (তাঁবাএ)।

পরবর্তী হি যে অপভ্রংশে একার হইয়া যায় বাংলায় তাহার অন্য প্রমাণ আছে। বারবার শব্দটিকে জোর দিবার সময় আমরা ‘বারে বারে’ বলি; সংস্কৃত নিশ্চয়ার্থসূচক হি-যোগে ইহা নিষ্পন্ন; বারহি বারহি–বারই বারই–বারে বারে। একেবারে শব্দটিরও ঐরূপ ব্যুৎপত্তি। প্রাচীন বাংলায় কর্মকারকে ‘এ’ বিভক্তি যোগ ছিল, তাহা বাংলা কাব্যপ্রয়োগ দেখিলেই বুঝা যায়:

লাজ কেন কর বধূজনে : কবিকঙ্কন।

করণ কারকেও ‘এ’ বিভক্তি চলে। যথা,

পূজিলেন ভূষণে চন্দনে।

ধনে ধান্যে পরিপূর্ণ।

তিলকে ললাট শোভিত।

বাংলায় সম্প্রদান কর্মের অনুরূপ। যথা,

দীনে কর দান।

গুরুজনে করো নতি।

অধিকরণের তো কথাই নাই।

যাহা হউক, সম্বন্ধের চিহ্ন লইয়া প্রায় সকল কারকের কাজ চলিয়া গেল কিন্তু স্বয়ং সম্বন্ধের বেলা কিছু গোল দেখা যায়।