ভগ্নহৃদয়
ম্লান তপনের মৃদু কিরণের রেখা।
কত ভাবনার স্তর     ভেদ করি পর পর
ওই হাসিটুকু আসি পঁহুছে অধরে!
ও হাসি কি অশ্রুজলে সিক্ত থরে থরে?
ও হাসি কি বিষাদের গোধূলির হাস?
ও হাসি কি বরষার      সুকুমারী লতিকার
ধৌতরেণু ফুলটির অতি মৃদু বাস?
মুরলা রে, কেন আহা, এমন তু,     হলি!
এত ভালোবাসা কারে দিলি জলাঞ্জলি?
যে জন রেখেছে মন শূন্যের উপরে,
আপনারি ভাব নিয়া     উলটিয়া পালটিয়া
দিনরাত যেই জন শূন্যে খেলা করে,
শূন্য বাতাসের পটে শত শত ছবি
মুছিতেছে আঁকিতেছে—     শতবার দেখিতেছে—
সেই এক মোহময় স্বপ্নময় কবি—
সদা যে বিহ্বল প্রাণে      চাহিয়া আকাশ-পানে,
আঁখি যার অনিমিষ আকাশের প্রায়,
মাটিতে চরণ তবু মাটিতে না চায়—
ভাবের আলোকে অন্ধ তারি পদতলে
অভাগিনী, লুটাইয়া পড়িলি কি বলে?
সে কি রে, অবোধ মেয়ে বারেক দেখিবে চেয়ে?
জানিতেও পারিবে না, যাইবে সে চ’লে
যুথিকাহৃদয় তোর ধূলি-সাথে দ’লে।
এত ভালোবাসা তারে কেন দিলি হায়?
সাগর-উদ্দেশ-গামী তটিনীর পায়
না ভাবিয়া না চিন্তিয়া যথা অবহেলে
ক্ষুদ্র নির্ঝরিণী দেয় আপনারে ঢেলে।
নিশীথের উদাসীন পথিক সমীর
শূন্য হৃদয়ের তাপে হইয়া অধীর
কুসুমকানন দিয়া যায় যবে বয়ে
আকুল রজনীগন্ধা কথাটি না কয়ে
প্রাণের সুরভি সব দিয়া তার পায়