প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
ক্ষান্তমণি। ঢের হয়েছে গোঁসাই ঠাকুর, আর ধর্মোপদেশ দিতে হবে না। আমাকে তোমার পছন্দ হয় না, না?
চন্দ্রকান্ত। কে বললে পছন্দ হয় না?
ক্ষান্তমণি। আমি গদ্য, আমি পদ্য নই, আমি শোলোক পড়ি নে, আমি বেলফুলের মালা পরাই নে—
চন্দ্রকান্ত। আমি গললগ্নীকৃতবস্ত্র হয়ে বলছি, দোহাই তোমার, তুমি শোলোক পোড়ো না, তুমি মালা পরিয়ো না, ওগুলো সবাইকে মানায় না—
ক্ষান্তমণি। কী বললে।
চন্দ্রকান্ত। আমি বললুম যে, বেলফুলের মালা আমাকে মানায় না, তার চেয়ে সাফ চাদরে ঢের বেশি শোভা হয়—পরীক্ষা করে দেখো।
ক্ষান্তমণি। যাও যাও, আর ঠাট্টা ভালো লাগে না। (অঞ্চলে মুখ আবরণ করিয়া) আমি গদ্য, আমি বেলেস্তারা!
চন্দ্রকান্ত। (নিকটে আসিয়া) কথাটা বুঝলে না ভাই! কেবল রাগই করলে! ওটা, শুদ্ধ অভিমানের কথা, আর কিছুই নয়। ভালোবাসা থাকলেই মানুষ অমন কথা বলে। আচ্ছা, তুমি আমার গা ছুঁয়ে বলো, তুমি ঘাটে পদ্মঠাকুরঝিকে বল নি—“আমার এমনি পোড়াকপাল যে বিয়ে করে ইস্তিক সুখ কাকে বলে একদিনের তরে জানলুম না।” আমি কি সে কথা শুনতে গিয়েছিলুম, না, শুনলে রাগ করতুম।
ক্ষান্তমণি। আমি কক্খনো পদ্মঠাকুরঝিকে ও কথা বলি নি।
চন্দ্রকান্ত। আহা, পদ্মঠাকুরঝিকে না বলতে পার, আর ঠিক ঐ কথাটিই না হতেও পারে, কিন্তু কাউকে কিচ্ছু বল নি? আচ্ছা, আমার গা ছুঁয়ে বলো।
ক্ষান্তমণি। তা আমি সৌরভীদিদিকে বলেছিলুম—
চন্দ্রকান্ত। কি বলেছিলে?
ক্ষান্তমণি। আমি বলেছিলুম—
চন্দ্রকান্ত। বলেই ফেলো-না!দেখো, আমি রাগ করবো না।
ক্ষান্তমণি। আমার গায়ে গয়না দেখতে পায় না বলে সৌরভীদিদি দুঃখু করছিল, তাই আমি কথায় কথায় বলেছিলুম—গয়না কোত্থেকে হবে! হাতে যা থাকে বই কিনতে আর বই বাঁধাতেই সব যায়। তাঁর যত শখ সব বইয়েতেই মিটেছে। বউ না হয়ে বই হলে আদর বেশি পাওয়া যেত। তা আমি বলেছিলুম।
চন্দ্রকান্ত। (গম্ভীর মুখে) হাটে-ঘাটে যেখানে-সেখানে বলে বেড়াও তোমার স্বামী গরিব, তোমাকে একখানা গয়না দিতে পারে না—স্ত্রী ওরকম অপবাদ রটিয়ে বেড়ানোর চেয়ে সন্ন্যাসী হয়ে বেরিয়ে যাওয়া ভালো।
ক্ষান্তমণি। তোমার পায়ে পড়ি ও রকম করে বোলো না। আমার দোষ হয়েছিল মানছি—আমি আর কখনো এমন বলব না।
চন্দ্রকান্ত। মুখে বল আর না বল মনে মনে আছে তো! মনে মনে ভাব তো এই লক্ষ্মীছাড়াটার সঙ্গে বিয়ে হয়ে আমার গায়ে একখানা গয়না চড়ল না—তার চেয়ে যদি মুখুজ্জেদের বড়ো ছেলে কেবলকৃষ্ণর সঙ্গে—
ক্ষান্তমণি। (চন্দ্রের মুখ চাপা দিয়া) অমন কথা তুমি ঠাট্টা করেও বোলো না, আমার ভালো লাগে না। আমার গয়নায় কাজ নেই—আমি জন্ম জন্ম শিবপুজো করেছিলুম তাই তোমার মতো এমন স্বামী পেয়েছি—
চন্দ্রকান্ত। আচ্ছা, তা হলে আমার চাদরখানা দাও।