গোড়ায় গলদ

ক্ষান্তমণি। (চাদর আনিয়া দিয়া) তুমি বাইরে বেরোচ্ছ যদি চুলগুলো অমন কাগের বাসার মতো করে বেরিয়ো না। একটু বোসো, তোমার চুল ঠিক করে দিই।

[ চিরুনি ব্রুশ লইয়া আঁচড়াইতে প্রবৃত্ত

চন্দ্রকান্ত। হয়েছে, হয়েছে।

ক্ষান্তমণি। না হয় নি—এক দণ্ড মাথাটা স্থির করে রাখো দেখি।

চন্দ্রকান্ত। তোমার সামনে আমার মাথার ঠিক থাকে না, দেখতে দেখতে ঘুরে যায়—

ক্ষান্তমণি। অত ঠাট্টায় কাজ কী। নাহয় আমার রূপ নেই, গুণ নেই—যে তোমার মাথা ঘোরাতে পারে এমন একটা খোঁজ করো গে—আমি চললুম।

[ চিরুনি ব্রুশ ফেলিয়া দ্রুত প্রস্থান

চন্দ্রকান্ত। এখন আর সময় নেই, ফিরে এসে রাগ ভাঙাতে হবে।

বিনোদবিহারী। (নেপথ্য হইতে) ওহে! আর কতক্ষণ বসিয়ে রাখবে? তোমাদের প্রেমাভিনয় সাঙ্গ হল কি।

চন্দ্রকান্ত। এইমাত্র পঞ্চমাঙ্কের যবনিকাপতন হয়ে গেল। হৃদয়বিদারক ট্র্যাজেডি!

[ প্রস্থান
তৃতীয় দৃশ্য
নিবারণের বাড়ি
নিবারণ ও শিবচরণ

নিবারণ। তবে তাই ঠিক রইল? এখন আমার ইন্দুমতীকে তোমার নিমাইয়ের পছন্দ হলে হয়।

শিবচরণ। সে-বেটার আবার পছন্দ কী। বিয়েটা তো আগে হয়ে যাক, তার পর পছন্দ সময়মত পরে করলেই হবে।

নিবারণ। না ভাই, কালের যে রকম গতি সেই অনুসারেই চলতে হয়।

শিবচরণ। তা হোক-না কালের গতি—অসম্ভব কখনো সম্ভব হতে পারে না। একটু ভেবেই দেখো-না, যে ছোঁড়া পূর্বে একবারও বিবাহ করে নি সে স্ত্রী চিনবে কী করে! সকল কাজেই তো অভিজ্ঞতা চাই। পাট না চিনলে পাটের দালালি করা যায় না। আর স্ত্রীলোক কি পাটের চেয়ে সিধে জিনিস। আজ পঁয়ত্রিশ বৎসর হল আমি নিমাইয়ের মাকে বিবাহ করেছি, তার থেকে পাঁচটা বৎসর বাদ দাও— তিনি গত হয়েছেন সে আজ বছর-পাঁচেকের কথা হবে—যা হোক তিরিশটা বৎসর তাঁকে নিয়ে চালিয়ে এসেছি— আমি আমার ছেলের বউ পছন্দ করতে পারব না, আর সে ছোঁড়া ভূমিষ্ঠ হয়েই আমার চেয়ে পেকে উঠল? তবে যদি তোমার মেয়ের কোনো ধনুকভঙ্গ পণ থাকে, আমার নিমাইকে যাচিয়ে নিতে চান, সে আলাদা কথা।

নিবারণ। নাঃ, আমার মেয়ে কোনো আপত্তিই করবে না, তাকে যা বলব সে তাই শুনবে। কিন্তু তোমার নিমাইকে আমি একবার দেখতে চাই।

ইন্দুমতী। (অন্তরাল হইতে) তাই বৈকি। আমি কখনো শুনব না। নিমাই! মা গো, নাম শুনলে গায়ে জর আসে! আমি তাকে বিয়ে করলুম বলে!

নিবারণ। আর-একটা কথা আছে—জান তো আদিত্য মরবার সময় তার মেয়ে কমলমুখীকে আমার হাতে সমর্পণ করে