মুক্তধারা

হুব্বা। নেহাত না থাকলে নয় বলেই আছে, নইলে একে কি—

পথিক। হাতের পরিচয় মুখের কথায় হয় না, যথাস্থানেই হবে,এখন ওঠো।


দ্বিতীয় পথিকের প্রবেশ

২ পথিক। ঐ আর-একজন লোককে পেয়েছি কঙ্কর।

কঙ্কর। লোকটা কে?

৩। আমি কেউ না, বাবা, আমি লছমন, উত্তরভৈরবের মন্দিরে ঘন্টা বাজাই।

কঙ্কর। সে তো ভালো কথা, হাতে জোর আছে। চলো শিবতরাই।

লছমন। যাব তো, কিন্তু মন্দিরের ঘন্টা—

কঙ্কর। বাবা ভৈরব নিজের ঘন্টা নিজেই বাজাবেন।

লছমন। দোহাই তোমাদের, আমার স্ত্রী রোগে ভুগছে।

কঙ্কর। তুমি চলে গেলে তার রোগ হয় সারবে, নয় সে মরবে— তুমি থাকলেও ঠিক তাই হত।

হুব্বা। ভাই লছমন, চুপ করে মেনে যাও। কাজটাতে বিপদ আছে বটে, কিন্তু আপত্তিতেও বিপদ কম নেই—আমি একটু আভাস পেয়েছি।

কঙ্কর। ঐ যে, নরসিঙের গলা শোনা যাচ্ছে। কী নরসিঙ, খবর ভালো তো?


কয়েকজন লোককে লইয়া নরসিঙের প্রবেশ

নরসিঙ। এই দেখো, দল জুটিয়ে এনেছি। আরো কয়দল আগেই রওনা হয়েছে।

কঙ্কর। তা হলে চলো, পথের মধ্যে আরো কিছু কিছু জুটবে।

দলের একজন। আমি যাব না।

কঙ্কর। কেন যাবে না? কী হয়েছে?

উক্ত ব্যক্তি। কিচ্ছু হয় নি, আমি যাব না।

কঙ্কর। লোকটার নাম কী নরসিঙ?

নরসিঙ। ওর নাম বনোয়ারি, পদ্মবীজের মালা তৈরি করে।

কঙ্কর। আচ্ছা, ওর সঙ্গে একটু বোঝাপড়া করে নিই—কেন যাবে না বলো তো।

বনোয়ারি। প্রবৃত্তি নেই। শিবতরাইয়ের লোকের সঙ্গে আমার ঝগড়া নেই। ওরা আমাদের শত্রু নয়।

কঙ্কর। আচ্ছা, না-হয় আমরাই ওদের শত্রু হলুম, তারও তো একটা কর্তব্য আছে?

বনোয়ারি। আমি অন্যায় করতে পারব না।

কঙ্কর। ন্যায় অন্যায় ভাববার স্বাতন্ত্র্য যেখানে সেইখানেই অন্যায় হচ্ছে অন্যায়। উত্তরকূট বিরাট, তার অংশরূপে যে কাজ তোমার দ্বারা হবে তার কোনো দায়িত্বই তোমার নেই।

বনোয়ারি। উত্তরকূটকে ছাড়িয়ে থাকেন এমন বিরাটও আছেন। উত্তরকূটও তাঁর যেমন অংশ, শিবতরাইও তেমনি।

কঙ্কর। ওহে নরসিঙ, লোকটা তর্ক করে যে। দেশের পক্ষে ওর বাড়া আপদ আর নেই।