বিসর্জন

প্রলয়ের কাল! — এখন সময় নহে

বিস্ময়ের। সেনাপতি, লহ সৈন্যভার।


দ্বিতীয় দৃশ্য
মন্দিরপ্রাঙ্গণ
জয়সিংহ ও রঘুপতি

রঘুপতি।     গেছে গর্ব, গেছে তেজ, গেছে ব্রাহ্মণত্ব।

ওরে বৎস, আমি তোর গুরু নহি আর।

কাল আমি অসংশয়ে করেছি আদেশ

গুরুর গৌরবে, আজ শুধু সানুনয়ে

ভিক্ষা মাগিবার মোর আছে অধিকার।

অন্তরেতে সে দীপ্তি নিবেছে, যার বলে

তুচ্ছ করিতাম আমি ঐশ্বর্যের জ্যোতি,

রাজার প্রতাপ। নক্ষত্র পড়িলে খসি

তার চেয়ে শ্রেষ্ঠতর মাটির প্রদীপ।

তাহারে খুঁজিয়া ফিরে পরিহাসভরে

খদ্যোত ধূলির মাঝে, খুঁজিয়া না পায়।

দীপ প্রতিদিন নেবে, প্রতিদিন জ্বলে,

বারেক নিভিলে তারা চির-অন্ধকার!

আমি সেই চিরদীপ্তিহীন ; সামান্য এ

পরমায়ু, দেবতার অতি ক্ষুদ্র দান,

ভিক্ষা মেগে লইয়াছি তারি দুটো দিন

রাজদ্বারে নতজানু হয়ে। জয়সিংহ,

সেই দুই দিন যেন ব্যর্থ নাহি হয়।

সেই দুই দিন যেন আপন কলঙ্ক

ঘুচায়ে মরিয়া যায়। কালামুখ তার

রাজরক্তে রাঙা করে তবে যায় যেন।

বৎস, কেন নিরুত্তর? গুরুর আদেশ

নাহি আর; তবু তোরে করেছি পালন

আশৈশব, কিছু নহে তার অনুরোধ?