বিসর্জন

সকলে মিলিয়া গান

 

থাকতে আর তো পারলি নে মা, পারলি কই?

কোলের সন্তানেরে ছাড়লি কই?

দোষী আছি অনেক দোষে,     ছিলি বসে ক্ষণিক রোষে,

          মুখ তো ফিরালি শেষে,     অভয় চরণ কাড়লি কই?

[ সকলের প্রস্থান

জয়সিংহ ও রঘুপতির প্রবেশ

জয়সিংহ।     সত্য বলো, প্রভু, তোমারি এ কাজ?

রঘুপতি।                                 সত্য

কেন না বলিব? আমি কি ডরাই সত্য

বলিবারে? আমারি এ কাজ। প্রতিমার

মুখ ফিরায়ে দিয়েছি আমি। কী বলিতে

চাও বলো। হয়েছ গুরুর গুরু তুমি,

কী ভর্ৎসনা করিবে আমারে? দিবে কোন্

উপদেশ?

জয়সিংহ।                 বলিবার কিছু নাই মোর।

রঘুপতি।     কিছু নাই? কোনো প্রশ্ন নাই মোর কাছে?

সন্দেহ জন্মিলে মনে মীমাংসার তরে

চাহিবে না গুরু-উপদেশ? এত দূরে

গেছ? মনে এতই কি ঘটেছে বিচ্ছেদ?

মূঢ়, শোনো। সত্যই তো বিমুখ হয়েছে

দেবী, কিন্তু তাই ব'লে প্রতিমার মুখ

নাহি ফিরে। মন্দিরে যে রক্তপাত করি

দেবী তাহা করে পান, প্রতিমার মুখে

সে রক্ত উঠে না। দেবতার অসন্তোষ

প্রতিমার মুখে প্রকাশ না পায়। কিন্তু

মূর্খদের কেমনে বুঝাব! চোখে চাহে

দেখিবারে, চোখে যাহা দেখাবার নয়।

মিথ্যা দিয়ে সত্যেরে বুঝাতে হয় তাই।

মূর্খ, তোমার আমার হাতে সত্য নাই।

সত্যের প্রতিমা সত্য নহে, কথা সত্য