বিসর্জন

তবু সে জননী আছে বসে, দুর্বলের

তরে কোল পাতি, একান্ত যে নিরুপায়

তারি তরে সমস্ত হৃদয় দিয়ে। আজ

কী এমন অপরাধ করিয়াছি মোরা

যার লাগি সে অসীম স্নেহ চেলে গেল

চিরমাতৃহীন করে অনাথ সংসার!

বৎসগণ, মাতৃগণ, বলো, খুলে বলো —

কী এমন করিয়াছি অপরাধ?

কেহ কেহ।                               মা ' র

বলি নিষেধ করেছ! বন্ধ মা ' র পূজা!

গোবিন্দমাণিক্য।   নিষেধ করেছি বলি, সেই অভিমানে

বিমুখ হয়েছে মাতা! আসিছে মড়ক,

উপবাস, অনাবৃষ্টি, অগ্নি, রক্তপাত —

মা তোদের এমনি মা বটে! দণ্ডে দণ্ডে

ক্ষীণ শিশুটিরে স্তন্য দিয়ে বাঁচাইয়ে

তোলে মাতা। সে কি তার রক্তপানলোভে?

হেন মাতৃ-অপমান মনে স্থান দিলি

যবে, আজন্মের মাতৃস্নেহসমৃতিমাঝে

ব্যথা বাজিল না? মনে পড়িল না মা ' র

মুখ?—‘ রক্ত চাই ' ‘ রক্ত চাই ' গরজন

করিছে জননী, অবোলা দুর্বল জীব

প্রাণভয়ে কাঁপে থরথর — নৃত্য করে

দয়াহীন নরনারী রক্তমত্ততায় —

এই কি মায়ের পরিবার? পুত্রগণ,

এই কি মায়ের স্নেহছবি?

প্রজাগণ।                               মূর্খ মোরা

বুঝিতে পারি নে।

গোবিন্দমাণিক্য।                 বুঝিতে পারো না! শিশু

দু দিনের, কিছু যে বোঝে না আর, সেও

তার জননীরে বোঝে। সেও বোঝে, ভয়

পেলে নির্ভয় মায়ের কাছে ; সেও বোঝে

ক্ষুধা পেলে দুগ্ধ আছে মাতৃস্তনে ; সেও