বিসর্জন

চাঁদপাল।     বলিতে সংকোচ মানি। ভয় হয়, পাছে

সত্যকার ছুরি চেয়ে নিষ্ঠুর সংবাদ

অধিক আঘাত করে রাজার হৃদয়ে।

গোবিন্দমাণিক্য। অসংকোচে বলে যাও। রাজার হৃদয়

সতত প্রস্তুত থাকে আঘাত সহিতে

কে করেছে হেন পরামর্শ?

চাঁদপাল।                             যুবরাজ

নক্ষত্ররায়।

গোবিন্দমাণিক্য।                        নক্ষত্র!

চাঁদপাল।                           স্বকর্ণে শুনেছি

মহারাজ, রঘুপতি যুবরাজে মিলে

গোপনে মন্দিরে বসে স্থির হয়ে গেছে

সব কথা।

গোবিন্দমাণিক্য।         দুই দণ্ডে স্থির হয়ে গেল

আজন্মের বন্ধন টুটিতে! হায় বিধি!

চাঁদপাল।     দেবতার কাছে তব রক্ত এনে দেবে —

গোবিন্দমাণিক্য।   দেবতার কাছে! তবে আর নক্ষত্রের

নাই দোষ। জানিয়াছি, দেবতার নামে

মনুষ্যত্ব হারায় মানুষ। ভয় নাই,

যাও তুমি কাজে! সাবধানে রব আমি।

[ চাঁদপালের প্রস্থান

রক্ত নহে, ফুল আনিয়াছি মহাদেবী!

ভক্তি শুধু — হিংসা নহে, বিভীষিকা নহে।

এ জগতে দুর্বলেরা বড়ো অসহায়

মা জননী, বাহুবল বড়োই নিষ্ঠুর,

স্বার্থ বড়ো ক্রূর, লোভ বড়ো নিদারুণ,

অজ্ঞান একান্ত অন্ধ — গর্ব চলে যায়

অকাতরে ক্ষুদ্রেরে দলিয়া পদতলে।

হেথা স্নেহ-প্রেম অতি ক্ষীন বৃন্তে থাকে,

পলকে খসিয়া পড়ে স্বর্থের পরশে।

তুমিও, জননী, যদি খড়্গ উঠাইলে,

মেলিলে রসনা, তবে সব অন্ধকার!