প্রায়শ্চিত্ত
রায়গড়। বসন্ত রায়ের প্রাসাদ। বসন্ত রায় একাকী আসীন
পাঠানের প্রবেশ ও সেলাম

বসন্ত রায়। খাঁসাহেব এস এস। সাহেব, তোমার মুখ এমন মলিন দেখছি কেন? মেজাজ ভালো তো?

পাঠান। মেজাজের কথা আর বলবেন না মহারাজ। একটি বয়েত আছে— রাত্রি বলে, আমার কি হাসবার ক্ষমতা আছে? যখন চাঁদ হাসে তখনই আমি হাসি, নইলে সব অন্ধকার! মহারাজ, আমরাই বা কে। আপনি না হাসলে যে আমাদের হাসি ফুরিয়ে যায়! আমাদের আর সুখ নেই প্রভু!

বসন্ত রায়। সে কী কথা সাহেব! আমার তো অসুখ কিছুই নেই।

পাঠান। এখন আপনার আর তেমন গানবাজনা শুনি নে। আপনার যে সেতার কোলে কোলেই থাকত সে তো আর দেখতেই পাই নে।

বসন্ত রায়। সেতার! সেতারে তো নাড়া দিলেই বেজে ওঠে। কিন্তু মানুষের মনে যখন সুর লাগে না তখন কার সাধ্য তাকে বাজায়।

সীতারামের প্রবেশ

সীতারাম। জয় হোক মহারাজ!

[ প্রণাম

বসন্ত রায়। আরে সীতারাম যে। ভালো আছিস তো? মুখ শুকনো যে। খবর সব ভালো তো? শীঘ্র বল্‌।

সীতারাম। খবর বড়ো খারাপ— সব বলছি।

পাঠান। হুজুর, তবে এখন আসি।

[ সেলাম ও প্রস্থান

বসন্ত রায়। সীতারাম, কী হয়েছে সব বল্‌, বল্‌, আমার প্রাণ বড়ো অধীর হচ্ছে। আমার দাদার-

সীতারাম। নিবেদন করছি মহারাজ। যুবরাজকে আমাদের মহারাজ কারাদণ্ড দিয়েছেন।

বসন্ত রায়। কারাদণ্ড! সে কী কথা! কেন, উদয় কী অপরাধ করেছিল?

সীতারাম। সে তো আমরা কিছু বুঝতে পারলুম না। হঠাৎ একদিন শুনলুম যুবরাজ বন্দী।

বসন্ত রায়। অ্যাঁ! বন্দী!

সীতারাম। আজ্ঞা হাঁ মহারাজ।

বসন্ত রায়। সীতারাম, এ কি কথা! তাকে কি একেবারে জেলখানায় ফৌজ পাহারায় বন্ধ করে রেখেছে?

সীতারাম। আজ্ঞে হাঁ মহারাজ!

বসন্ত রায়। তাকে কি একবার বেরোতেও দেয় না?

সীতারাম। আজ্ঞা না।

বসন্ত রায়। সে একলা কারাগারে?