ফাল্গুনী

মাঝি। আমি ঘাটের মাঝি।

দাদা। আর আপনি?

কোটাল। আমি পাড়ার কোটাল।

দাদা। তা উত্তম হল — আপনাদের কিছু শোনাতে ইচ্ছা করি। বাজে জিনিষ না — কাজের কথা।

মাঝি। বেশ বেশ। আহা, বলেন, বলেন।

কোটাল। আমাদের গুরু বলেছিলেন, ভালো কথা বলবার লোক অনেক মেলে কিন্তু ভালো কথা যে-মরদ খাড়া দাঁড়িয়ে শুনতে পারে তাকেই শাবাশ। ওটা ভাগ্যের কথা কিনা। তা, বলো ঠাকুর বলো।

দাদা। আজ পথে যেতে যেতে দেখলুম, রাজপুরুষ একজন বন্দীকে নিয়ে চলেছে। শুনলুম, সে কোনো শ্রেষ্ঠী, তার টাকার লোভেই রাজা মিথ্যা ছুতো করে তাকে ধরেছে। শুনে আমি নিকটেই মুদির দোকানে বসে এই শ্লোকটি রচনা করেছি। দেখো বাপু, আমি বানিয়ে একটি কথাও লিখি নে। আমি যা লিখব রাস্তায় ঘাটে তা মিলিয়ে নিতে পারবে।

ঠাকুর, কী লিখেছ শুনি।

দাদা।

আত্মরস লক্ষ্য ছিল ব'লে

ইক্ষু মরে ভিক্ষুর কবলে।

ওরে মূর্খ, ইহা দেখি শিক্ষ —

ফল দিয়ে রক্ষা পায় বৃক্ষ।

বুঝেছ? রস জমায় বলেই ইক্ষু বেটা মরে, যে গাছ ফল দেয় তাকে তো কেউ মারে না।

কোটাল। ওহে মাঝি, খাসা লিখেছে হে!

মাঝি। ভাই কোটাল, কথাটির মধ্যে সার আছে।

কোটাল। শুনলে মানুষের চৈতন্য হয়। আমাদের কায়েতের পো এখানে থাকলে ওটা লিখে নিতুম রে। পাড়ায় খবর পাঠিয়ে দে।

সর্বনাশ করলে রে!

চন্দ্রহাস। ও ভাই মাঝি, তুমি যে বললে আমাদের সঙ্গে বেরবে, দাদার চৌপদী জমলে তো আর —

মাঝি। আরে রসুন মশায়, পাগলামি রেখে দিন। ঠাকুরকে পেয়েছি, দুটো ভালো কথা শুনে নিই — বয়েস হয়ে এল, কোন্‌ দিন মরব।

ভাই, সেইজন্যেই তো বলছি, আমাদের সঙ্গ পেয়েছ, ছেড়ো না।

চন্দ্রহাস। দাদাকে চিরদিনই পাবে কিন্তু আমরা একবার ম'লে বিধাতা দ্বিতীয়বার আর এমন ভুল করবেন না।

(বাহির হইতে) ওগো কোটাল, কোটাল, কোটাল!

কে রে! অনাথ কলু দেখছি। কী হয়েছে।

কলু। সেই যে ছেলেটাকে পুষেছিলুম, তাকে বুঝি কাল রাত্রে ভুলিয়ে নিয়ে গেছে সেই ছেলেধরা।

কোন্‌ ছেলেধরা।

কলু। সেই বুড়ো।