ফাল্গুনী

পুঁথিতে তার কথা লেখা আছে।

সর্দার। তার চেহারাটা কী রকম।

কেউ বলে, সে সাদা, মড়ার মাথার খুলির মতো ; কেউ বলে, সে কালো, মড়ার চোখের কোটরের মতো।

কেন, তুমি কি তার খবর রাখ না সর্দার।

সর্দার। আমি তাকে বিশ্বাস করি নে।

বাঃ, তুমি যে উলটো কথা বললে। সেই বুড়োই তো সব চেয়ে বেশি করে আছে। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের পাঁজরের ভিতরে তার বাসা।

পণ্ডিতজি বলে, বিশ্বাস যদি কাউকে না করতে হয় সে কেবল আমাদের। আমরা আছি কি নেই তার কোনো ঠিকানাই নেই।

চন্দ্রহাস। আমরা যে ভারি কাঁচা, আমরা যে একেবারে নতুন, ভবের রাজ্যে আমাদের পাকা দলিল কোথায়।

সর্দার। সর্বনাশ করলে দেখছি। তোরা পণ্ডিতের কাছে আনাগোনা শুরু করেছিস নাকি।

তাতে ক্ষতি কী সর্দার।

সর্দার। পুঁথির বুলির দেশে ঢুকলে যে একেবারে ফ্যাকাশে হয়ে যাবি। কার্তিকমাসের সাদা কুয়াশার মতো। তোদের মনের মধ্যে একটুও রক্তের রঙ থাকবে না। আচ্ছা, এক কাজ কর্। তোরা খেলার কথা ভাবছিলি?

হাঁ সর্দার, ভাবনায় আমাদের চোখে ঘুম ছিল না।

আমাদের ভাবনার চোটে পাড়ার লোক রাজদরবারে নালিশ করতে ছুটেছিল।

সর্দার। একটা নতুন খেলা বলতে পারি।

বলো, বলো, বলো।

সর্দার। তোরা সবাই মিলে বুড়োটাকে ধরে নিয়ে আয়।

নতুন বটে, কিন্তু এটা ঠিক খেলা কি না জানি নে।

সর্দার। আমি বলছি, এ তোরা পারবি নে।

পারব না? বলো কী। নিশ্চয়ই পারব।

সর্দার। কখনো পারবি নে।

আচ্ছা যদি পারি?

সর্দার। তা হলে গুরু ব'লে আমি তোদের মানব।

গুরু! সর্বনাশ! আমাদের সুদ্ধ বুড়ো বানিয়ে দেবে?

সর্দার। তবে কী চাস্‌ বল্‌।

তোমার সর্দারি আমরা কেড়ে নেব।

সর্দার। তা হলে তো বাঁচি রে! তোদের সর্দারি কি সোজা কাজ। এমনই অস্থির করে রেখেছিস যে হাড়গুলো সুদ্ধ উলটো-পালটা হয়ে গেছে। — তা হলে রইল কথা?

চন্দ্রহাস। হাঁ, রইল কথা। দোলপূর্ণিমার দিনে তাকে ঝোলার উপর দোলাতে দোলাতে তোমার কাছে হাজির করে দেব।

কিন্তু তাকে নিয়ে কী করবে সর্দার।

সর্দার। বসন্ত-উৎসব করব।