শেষরক্ষা

বুড়ি। না, দিদিঠাকরুন কথাটি কবেন না, কিন্তু গিন্নি মা —

গদাই। কথাটি কবেন না। আহা! (দীর্ঘনিশ্বাস) তা এক কাজ করো। এই টাকাটি দিচ্ছি, নাহয় বাজার থেকে তেল কিনে আনো, আমি ততক্ষণ তোমার তরকারি আগলাচ্ছি। তোমার দিদিঠাকরুণ বুঝি কথাটি কবেন না, অ্যাঁ ঠাকুরদাসী?

বুড়ি। তিনি বড়ো লক্ষ্মী।

গদাই। লক্ষ্মী! আহা, তা তোমার দিদিঠাকরুন কী খেতে ভালোবাসেন বলো দেখি।

বুড়ি। ছাতাওয়ালা গলির মোড়ে ভরু ফুলুরিওয়ালা গরম গরম বেগ্‌নি ভেজে দেয়, তাই দিয়ে আমের আচার দিয়ে খেতে তাঁর খুব শখ।

গদাই। বটে! তা এই নাও, ঠাকুরদাসী, একটাকার বেগ্‌নি কিনে আনো তো।

বুড়ি। একটাকার বেগ্‌নি! সে যে অনেক হবে।

গদাই। তা হোক, নাহয় কিছু বেশিই হল।

বুড়ি। তা আমি কিনে নাহয় আনব পরে, তুমি এই দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকবে কতক্ষণ।

গদাই। তাতে ক্ষতি নেই, ওটা আমার একটা শখ।

বুড়ি। দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকা!

গদাই। না, না, ঐ যে তোমার বেগ্‌নি — ঐ যে তুমি বললে না —

বুড়ি। নাহয় দিদিঠাকরুনকে বেগ্‌নি খাওয়াব, তাই বলে কি —

গদাই। আমি এইরকম খাওয়াতে বড়ো ভালোবাসি, ওটা আমার একটা বাতিক বললেই হয়। বিশেষত গরম গরম বেগ্‌নি। বেগ্‌নির ঝুড়ি চক্ষে দেখে তবে নড়ব।

বুড়ি। তা হলে দাঁড়াও, দেরি করব না।

[ প্রস্থান

মোড়ক হস্ত এক ব্যক্তির প্রবেশ

ঐ ব্যক্তি। সরকারমশায় বুঝি?

গদাই। কেন বলো তো?

ঐ ব্যক্তি। এই বাড়ির কোন্‌ মাঠাকরুন সাত জোড়া সিল্কের মোজা রিফু করতে আমাদের দোকানে পাঠিয়েছিলেন, সেগুলি এনেছি।

গদাই। অ্যাঃঁ, পায়ের মোজা! ঐ জন্যেই তো এতক্ষণ দাঁড়িয়ে আছি। দাও দাও।

দরজি। দামটা নগদ চুকিয়ে দিতে হবে।

গদাই। কত?

দরজি। আড়াই টাকা।

গদাই। এই নিয়ে যাও। তোমার রেট তো খুব শস্তা হে!

[ দরজির প্রস্থান

হায় হায়, আজ কী শুভক্ষণেই বেরিয়েছিলুম! (বুকের কাছে চাপিয়া) সেই পা দুখানির অদৃশ্য চলন দিয়ে দলন দিয়ে এই মোজার ফাঁকগুলি ভরা। আহাহা, গা শিউরে উঠছে, কবিতা লিখতে ইচ্ছে করছে —