প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
বিনোদ। না, তাকে দেখতে চাই নে। আমি ঐ গানরূপটিকে বরন করব।
চন্দ্রকান্ত। বিনু, এই কথাটা তোর মুখেও একটু বাড়াবাড়ি শোনাচ্ছে। তার চেয়ে একটা গ্রামোফোন কেন্-না? এ যে ভাই মানুষ, দেখেশুনে নেওয়া ভালো।
বিনোদ। মানুষকে কি চোখ চাইলেই দেখা যায়? তুমিও যেমন! রাখো জীবনটা বাজি, চোখ বুজে দান তুলে নাও, তার পরে হয় রাজা নয় ফকির ; একেই তো বলে খেলা।
চন্দ্রকান্ত। উঃ! কী সাহস! তোমার কথা শুনলে আমার মরচে-পড়া বুকেও ঝলক মারে, ফের আর-একটা বিয়ে করতে ইচ্ছে করে। না দেখে বিয়ে তো আমরাও করেছি, কিন্তু এমনতরো মরিয়া করে তোলে নি।
গদাই। তা বলি, যদি বিয়ে করতে হয় নিজে না দেখে বিয়ে করাই ভালো। ডাক্তারের পক্ষে নিজের চিকিৎসা করাটা কিছু নয়। মেয়েটি কে বলো তো হে চন্দরদা।
চন্দ্রকান্ত। আমাদের নিবারণবাবুর বাড়িতে থাকেন, নাম কমলমুখী। আদিত্যবাবু আর নিবারণবাবু পরম বন্ধু ছিলেন। আদিত্য মরবার সময় মেয়েটিকে নিবারণবাবুর হাতে সমর্পণ করে দিয়ে গেছেন।
গদাই। তুমি তোমার প্রতিবেশিনীকে আগে থাকতেই দেখো নি তো?
চন্দ্রকান্ত। আমার কি আর আশে পাশে দৃষ্টি দেবার জো আছে! আমার এ দুটি চক্ষুই একেবারে দস্তখতি সীলমোহর করা, অন্ হার্ ম্যাজিস্টিস্ সার্ভিস্। তবে শুনেছি বটে, দেখতে ভালো এবং স্বভাবটিও ভালো।
গদাই। আচ্ছা, এখন তা হলে আমরা কেউ দেখব না, একেবারে সেই বিবাহের রাত্রে চমক লাগবে।
চন্দ্রকান্ত। তোমরা একটু বোসো ভাই, আমি অমনি চট করে চাদরটা পরে আসি। এই পাশের ঘরেই।
[ প্রস্থান
পাশের ঘরে
চন্দ্রকান্ত ও ক্ষান্তমণি
চন্দ্রকান্ত। বড়োবউ, ও বড়োবউ! চাবিটা দাও দেখি।
ক্ষান্তমণি। কেন জীবনসর্বস্ব নয়নমণি, দাসীকে কেন মনে পড়ল?
চন্দ্রকান্ত। ও আবার কি! যাত্রার দল খুলবে নাকি? আপাতত একটা সাফ দেখে চাদর বের করে দাও দেখি, এখুনি বেরোতে হবে —
ক্ষান্তমণি। ( অগ্রসর হইয়া) আদর চাই! প্রিয়তম, তা আদর করছি।
চন্দ্রকান্ত। ( পশ্চাতে হঠিয়া) আরে, ছি ছি ছি! ও কী ও!
ক্ষান্তমণি। নাথ, বেলফুলের মালা গেঁথে রেখেছি, এখন কেবল চাঁদ উঠলেই হয় —
চন্দ্রকান্ত। ও! গুণবর্ণনা আড়াল থেকে সমস্ত শোনা হয়েছে দেখছি। বড়োবউ, কাজটা ভালো হয় নি। ওটা বিধাতার অভিপ্রায় নয়। তিনি মানুষের শ্রবণশক্তির একটা সীমা করে দিয়েছেন, তার কারণই হচ্ছে পাছে অসাক্ষাতে যে কথাগুলো হয় তাও মানুষ শুনতে পায় ; তা হলে পৃথিবীতে বন্ধুত্ব বলো, আত্মীয়তা বলো, কিছুই টিকতে পারে না।