গুরুবাক্য

শিরোমণি। তোমরা বলছ রাবণের সঙ্গে যুদ্ধে জটায়ু ম'ল কেন — এক কথায় এর উত্তর দিই কী করে!

সকলে। তা তো বটেই। তা তো বটেই।

শিরোমণি। প্রথমে দেখতে হবে ‘ রাবণের ' ই সঙ্গে যুদ্ধ হয় কেন, তার পরে দেখতে হবে রাবণের সঙ্গে ‘ যুদ্ধ ' ই বা হয় কেন, তার পরে দেখতে হবে রাবণের সঙ্গে যুদ্ধে ‘ জটায়ু ' ই বা মরে কেন, সব শেষে দেখতে হবে রাবণের সঙ্গে যুদ্ধে জটায়ু ‘ মরে ' ই বা কেন?

বদন হাল ছাড়িয়া দিয়া চিন্তাসাগরে নিমজ্জমান

অচ্যুত। ( খগেন্দ্রকে ঠেলিয়া ) শুনছ খগেনবাবু?

অপূর্ব। কী খগেনবাবু, মুখে যে কথাটি নেই?

কার্তিক। খগেন্দ্র-সাহেব, তোমার কেমিস্ট্রি গেল কোথায় হে?

খগেন্দ্র রক্তমুখচ্ছবি

শিরোমণি। তবে একে একে উত্তর দিই। প্রথম প্রশ্নের উত্তর, নিয়তিঃ কেন বাধ্যতে।

বদন। ( দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়া ) আঃ, বাঁচলুম। এ ছাড়া আর কোনো উত্তর হতেই পারে না।

শিরোমণি। যদি বল ‘ নিয়তিকে কে বাধা দিতে পারে ' এ কথার অর্থ কী, তবে সরল করে বুঝিয়ে দিই। নিয়তত্বই হচ্ছে নিয়তির গুণ এবং নিয়তের গুণই হচ্ছে নিয়তি। তা যদি হয় তবে নিয়তকালবর্তী যে নিয়তি তাকে পুনশ্চ নিয়ত নিয়ন্ত্রিত করতে পারে এমন দ্বিতীয় নিয়তির সম্ভাবনা কুতঃ? কারণ কিনা, নিত্য যাহা তাহাই নিয়ত এবং তাহাই নিয়ন্তা, অতএব রাবণের সঙ্গেই যে জটায়ুর যুদ্ধ হবে এ আর বিচিত্র কী!

সকলে। এ আর বিচিত্র কী!

বদন। অহো, এ আর বিচিত্র কী!

শিরোমণি। এক্ষণে দ্বিতীয় প্রশ্ন-

বদন। কিন্তু আর নয়, প্রথমটা আগে ভালো করে জীর্ণ করি।

অচ্যুত। কিন্তু কী চমৎকার উত্তর!

অপূর্ব। কী সরল মীমাংসা!

কার্তিক। কী পরিষ্কার ভাব!

উমেশ। কী গভীর শাস্ত্রজ্ঞান!

বদন। ( শিরোমণির মুখের দিকে অনেকক্ষণ চাহিয়া ) গুরুদেব, আপনার অবর্তমানে আমাদের কী দশা হবে!

সকলের বাষ্পবিসর্জন