গুরুবাক্য

বদন। আরে রাম, ও কি একটা উত্তর হল! ও তো সকলেই জানে।

কার্ত্তিক। ওতো আমিও বলতে পারতুম।

অপূর্ব। ও রকম উত্তরে কি মন সন্তুষ্ট হয়?

বদন চিন্তাম্বিত। খগেন্দ্র অপ্রতিভ

অচ্যুত। ( শশব্যস্ত) ঐ-যে গুরু আসছেন।

উমেশ। ঐ-যে শিরোমণিমশায়।

বদন। ( সহসা চিন্তাভঙ্গে চকিত হইয়া) অ্যাঁ, গুরুদেব আসছেন! বাঁচলুম, আমার অর্ধেক সংশয় এখনি দূর হয়ে গেল।


শিরোমণি মহাশয়ের প্রবেশ

সকলের ভূমিষ্ঠ হইয়া প্রণাম

শিরোমণি। স্বস্তি স্বস্তি!

বদন। গুরুদেব, কাল মশারি ঝাড়তে ঝাড়তে মনে একটা প্রশ্ন উদয় হয়েছে.।

শিরোমণি। প্রকাশ করে বলো।

বদন। বিহগরাজ জটায়ু রাবণের সঙ্গে যুদ্ধে কেন নিহত হলেন? ( অঙ্গুলিনির্দেশপূর্বক) আমাদের খগেন্দ্রবাবু (খগেন্দ্র অত্যন্ত লজ্জিত ও কুন্ঠিত) বলছিলেন অস্ত্রাঘাতই তার কারণ।

শিরোমণি। বটে! হাঃ হাঃ হাঃ, আধুনিক নব্যতন্ত্র কালেজের ছেলের মতোই উত্তর হয়েছে। শাস্ত্রচর্চা ছেড়ে বিজ্ঞান পড়ার ফলই এই। প্রশ্ন হল, জটায়ুর মৃত্যু হল কেন, উত্তর হল অস্ত্রাঘাতে। এ কেমন হল জান? কাশীধামে বৃষ্টি হল আর খড়দহে পঙ্গপালে ধান খেলে। হা হা হাঃ।

অপূর্ব। ঠিক তাই বটে। আজকাল এইরকমই হয়েছে, বুঝেছেন শিরোমণিমশায়?

শিরোমণি। আচ্ছা বাপু খগেন্দ্র, তুমি তো অনেকগুলো পাস দিয়েছ, তুমিই বলো তো, অস্ত্রাঘাতেই বা জটায়ূর মৃত্যু হল কেন, রক্তপিত্ত রোগেই বা না মরে কেন? রাবণের সঙ্গেই বা যুদ্ধ হয় কেন, ভস্মলোচনের সঙ্গেই বা না হল কেন? অত কথায় কাজ কী, জটায়ুই বা মরে কেন, রাবণ ম'লেই বা ক্ষতি কী ছিল?

বদন পূর্বাপেক্ষা চিন্তাম্বিত

অচ্যুত ও অপূর্ব। ( গভীর চিন্তার সহিত) তাই তো, এত দেশ থাকতে জটায়ুই বা মরে কেন!

উমেশ। কী হে খগেন্দ্র, একটা জবাব দাও-না। তোমাদের রস্কো-সাহেব কী লেখেন?

কার্তিক। তোমাদের টিণ্ডালই বা কী বলেন — রাবণের সঙ্গেই বা যুদ্ধ হয় কেন?

অচ্যুত। রক্তপিত্তে না ম'রে অস্ত্রাঘাতে মরবার জন্যেই বা তার এত মাথাব্যথা কেন? হক্‌সলি সাহেব কী মীমাংসা করেন শুনি।

খগেন্দ্র। ( আধমরা হইয়া) গুরুদেব, আমি মূঢ়মতি, না বুঝে একটা কথা বলে ফেলেছি। মাপ করুন। শ্রীমুখের উত্তরের জন্যে উৎসুক হয়ে আছি।