কাহিনী

কুরুকুলকামিনীর, সে রত্নভূষণে

আমারে সাজায়ে তারে যেতে হল বনে।

গান্ধারী।   হা রে মূঢ়ে, শিক্ষা তবু হল না তোমার —

সেই রত্ন নিয়ে তবু এত অহংকার!

একি ভয়ংকরী কান্তি, প্রলয়ের সাজ।

যুগান্তের উল্কাসম দহিছে না আজ

এ মণিমঞ্জীর তোরে? রত্নললাটিকা

এ যে তোর সৌভাগ্যের বজ্রানলশিখা।

তোরে হেরি অঙ্গে মোর ত্রাসের স্পন্দন

সঞ্চারিছে, চিত্তে মোর উঠিছে ক্রন্দন —

আনিছে শঙ্কিত কর্ণে তোর অলংকার

উন্মাদিনী শংকরীর তাণ্ডবঝংকার।

ভানুমতী।  মাতঃ, মোরা ক্ষত্রনারী, দুর্ভাগ্যের ভয়

নাহি করি। কভু জয়, কভু পরাজয় —

মধ্যাহ্নগগনে কভু, কভু অস্তধামে,

ক্ষত্রিয়মহিমা-সূর্য উঠে আর নামে।

ক্ষত্রবীরাঙ্গনা, মাতঃ, সেই কথা স্মরি

শঙ্কার বক্ষেতে থাকি সংকটে না ডরি

ক্ষণকাল। দুর্দিন দুর্যোগ যদি আসে,

বিমুখ ভাগ্যেরে তবে হানি উপহাসে

কেমনে মরিতে হয় জানি তাহা দেবী —

কেমনে বাঁচিতে হয় শ্রীচরণ সেবি

সে শিক্ষাও লভিয়াছি।

গান্ধারী।                        বৎসে, অমঙ্গল

একেলা তোমার নহে। লয়ে দলবল

সে যবে মিটায় ক্ষুধা, উঠে হাহাকার,

কত বীররক্তস্রোতে কত বিধবার

অশ্রুধারা পড়ে আসি — রত্ন-অলংকার

বধূহস্ত হতে খসি পড়ে শত শত

চূতলতাকুঞ্জবনে মঞ্জরীর মতো

ঝঞ্ঝাবাতে। বৎসে, ভাঙিয়ো না বদ্ধ সেতু,

ক্রীড়াচ্ছলে তুলিয়ো না বিপ্লবের কেতু