কাহিনী

গান্ধারী।   মাতা আমি নহি? গর্ভভারজর্জরিতা

জাগ্রত হৃৎপিণ্ডতলে বহি নাই তারে?

স্নেহবিগলিত চিত্ত শুভ্র দুগ্ধধারে

উচ্ছ্বসিয়া উঠে নাই দুই স্তন বাহি

তার সেই অকলঙ্ক শিশুমুখ চাহি?

শাখাবন্ধে ফল যথা সেইমত করি

বহু বর্ষ ছিল না সে আমারে আঁকড়ি

দুই ক্ষুদ্র বহুবৃন্ত দিয়ে — লয়ে টানি

মোর হাসি হতে হাসি, বাণী হতে বাণী,

প্রাণ হতে প্রাণ? তবু কহি, মহারাজ,

সেই পুত্র দুর্যোধনে ত্যাগ করো আজ।

ধৃতরাষ্ট্র।  কী রাখিব তারে ত্যাগ করি?

গান্ধারী।                      ধর্ম তব।

ধৃতরাষ্ট্র।  কী দিবে তোমারে ধর্ম?

গান্ধারী।                       দুঃখ নব নব।

পুত্রসুখ রাজ্যসুখ অধর্মের পণে

জিনি লয়ে চিরদিন বহিব কেমনে

দুই কাঁটা বক্ষে আলিঙ্গিয়া?

ধৃতরাষ্ট্র।                            হায় প্রিয়ে,

ধর্মবশে একবার দিনু ফিরাইয়ে

দ্যূতবদ্ধ পাণ্ডবের হৃত রাজ্যধন।

পরক্ষণে পিতৃস্নেহ করিল গুঞ্জন

শত বার কর্ণে মোর, “ কী করিলি ওরে!

এক কালে ধর্মাধর্ম দুই তরী- ' পরে

পা দিয়ে বাঁচে না কেহ। বারেক যখন

নেমেছে পাপের স্রোতে কুরুপুত্রগণ

তখন ধর্মের সাথে সন্ধি করা মিছে ;

পাপের দুয়ারে পাপ সহায় মাগিছে।

কী করিলি হতভাগ্য, বৃদ্ধ বুদ্ধিহত,

দুর্বল দ্বিধায় পড়ি? অপমানক্ষত

রাজ্য ফিরে দিলে তবু মিলাবে না আর

পাণ্ডবের মনে — শুধু নব কাষ্ঠভার