পেটে ও পিঠে

বনমালীর শশব্যস্ত হইয়া কাড়িয়া লইবার চেষ্টা

তিনকড়ি। ( সরোষে পৃষ্ঠে চপেটাঘাত করিয়া) এতবড়ো ধেড়ে ছেলে হলি, এইটে কী জানিস নে! এটা সন্দেশ। এটা খেতে হয়।

তিনকড়ির মুখের মধ্যে সন্দেশের দ্রুত অন্তর্ধান

 

বনমালী। ( পৃষ্ঠে হাত দিয়া ) ভ্যাঁ —

তিনকড়ি। ছি ছি ভুতুবাবু, তোমার জ্ঞান কবে হবে বলো দেখি। এইটে জান না যে, পেটে খেলে পিঠে সয়?


আর-একটা সন্দেশ মুখের ভিতর পুরণ

 

বনমালী। ( দ্বিগুণ বেগে ) ভ্যাঁ —

তিনকড়ি। তবে, তুমি কি বল পেটে খেলে পিঠে সয় না? এই দেখো-না কেন, পেটে খেলে ( আর-একটা সন্দেশ খাইয়া) পিঠে সয়-

বনমালীর পৃষ্ঠে চপেটাঘাত

সয় না?

বনমালী। ( সরোদনে চীৎকারপূর্বক ) না ন্না ন্না।

তিনকড়ি। ( শেষ সন্দেশটি নিঃশেষ করিয়া) তা হবে। তোমার তা হলে সয় না দেখছি। যার যেমন ধাত। তবে থাক্‌, তবে আর কাজ নেই। তবে এই স্থির হল কারো বা পেটে সমস্তই সয়, কারো বা পিঠে কিছুই সয় না। যেমন আমি আর তুমি।

সহসা বনমালীর পিতার প্রবেশ

 

পিতা। কী রে ভুতু, কাঁদছিস কেন?

পিতাকে দেখিয়া বনমালীর দ্বিগুণ ক্রন্দন

 

তিনকড়ি। ( বনমালীর পৃষ্ঠে হাত বুলাইয়া অতি কোমল স্বরে) বাবা জিগ্‌গেস করছেন, কথার উত্তর দাও।

বনমালী। ( সরোদনে) আমাকে মেরেছে.।

তিনকড়ি। আজ্ঞে, পাড়ার একটা ডানপিটে ছেলে খামকা মেরে গেল, বেচারার কোনো দোষ নেই-সন্দেশগুলি খেয়ে ভুতুবাবু ঠোঙাটি নিয়ে খেলা করছিল-

পিতা। ( সরোষে) ভুতু, কে মেরেছে রে?

বনমালী। ( তিনকড়িকে দেখাইয়া ) ও মেরেছে।

তিনকড়ি। আজ্ঞে হাঁ, আমি তাকে খুব মেরেছি বটে। কার না রাগ হয় বলুন দেখি। ছেলেমানুষ খেলা করছে-খামকা ওকে মেরে ওর ঠোঙাটা কেড়ে নেও কেন বাপু? আপনি থাকলে আপনিও তাকে মারতেন।

পিতা। আমি থাকলে তার দুখানা হাড় একত্তর রাখতেম না। যত-সব ডানপিটে ছেলে এ পাড়ায় জুটেছে।

বনমালী। বাবা, ও আমার সন্দেশ —

তিনকড়ি। ( নিবৃত্ত করিয়া) আরে, আরে, ও কথা আর বলতে হবে না।