মালিনী
তুমি হলে জয়ী। সর্ব অপমানভার
সকল নিষ্ঠুরঘাত করিনু গ্রহণ।
রক্ত উচ্ছ্বসিয়া উঠে উৎসের মতন
বিদীর্ণ হৃদয় হতে— তবু সমুজ্জ্বল
তব শান্তি, তব প্রীতি, তব সুমঙ্গল
অম্লান-অচল-দীপ্তি করিছে বিরাজ
সর্বোপরি। ভক্তের পরীক্ষা হল আজ,
জয় দেবী। ক্ষেমংকর, তুমি দিবে প্রাণ—
আমার ধর্মের লাগি করিয়াছি দান
প্রাণের অধিক প্রিয় তোমার প্রণয়,
তোমার বিশ্বাস। তার কাছে প্রাণভয়
তুচ্ছ শতবার।
ক্ষেমংকর।                 ছাড়ো এ প্রলাপবাণী।
মৃত্যু যিনি তাঁহারেই ধর্মরাজ জানি—
ধর্মের পরীক্ষা তাঁরি কাছে। বন্ধুবর,
এসো তবে কাছে এসো, ধরো মোর কর,
চলো মোরা যাই সেথা দোঁহে এক সনে,
যেমন সে বাল্যকালে— সে কি পড়ে মনে,
কতদিন সারারাত্রি তর্ক করি, শেষে
প্রভাতে যেতেম দোঁহে গুরুর উদ্দেশে
কে সত্য কে মিথ্যা তাহা করিতে নির্ণয়।
তেমনি প্রভাত হোক। সকল সংশয়
আজিকে লইয়া চলি অসংশয় ধামে,
দাঁড়াই মৃত্যুর পাশে দক্ষিণে ও বামে
দুই সখা, লয়ে দু জনের প্রশ্ন যত।
সেথায় প্রত্যক্ষ সত্য উজ্জ্বল উন্নত—
মুহূর্তে পর্বতপ্রায় বিচার-বিরোধ
বাষ্পসম কোথা যাবে! দুইটি অবোধ
আনন্দে হাসিব চাহি দোঁহে দোঁহাকারে।
সব চেয়ে বড়ো আজি মনে কর যারে
তাহারে রাখিয়া দেখো মৃত্যুর সম্মুখে।
সুপ্রিয়।    বন্ধু, তাই হোক।