মালিনী
আজন্মের বন্ধু তুমি তোমার বিরহ?
সিদ্ধি যবে লব্ধপ্রায়, তুমি হেথা বসে
কী করেছ—রাজগৃহমাঝে সুখালসে
কী ধর্ম মনের মতো করেছ সৃজন
দীর্ঘ অবসরে!
সুপ্রিয়।                  ওগো বন্ধু, এ ভুবন
নহে কি বৃহৎ? নাই কি অসংখ্য জন,
বিচিত্র স্বভাব? কাহার কী প্রয়োজন
তুমি কি তা জান? গগনে অগণ্য তারা
নিশিনিশি বিবাদ কি করিছে তাহারা
ক্ষেমংকর? তেমনি জালায়ে নিজ জ্যোতি
কত ধর্ম জাগিতেছে তাহে কোন্‌ ক্ষতি!
ক্ষেমংকর।     মিছে আর কেন বন্ধু। ফুরালো সময়,
বাক্য লয়ে মিথ্যা খেলা, তর্ক আর নয়।
সত্যমিথ্যা পাশাপাশি নির্বিরোধে রবে
এত স্থান নাহি নাহি অনন্ত এ ভবে।
অন্নরূপে ধান্য যেথা উঠে চিরদিন
রোপিবে তাহারি মাঝে কন্টক নবীন,
হে সুপ্রিয়, প্রেম এত সর্বপ্রেমী নয়।
ছিল চিরদিবসের বিশ্রব্ধ প্রণয়,
আনিবে বিশ্বাসঘাত বক্ষোমাঝে তার,
বন্ধু মোর, উদারতা এত কি উদার!
কেহ বা ধর্মের লাগি সহি নির্যাতন
অকালে অস্থানে মরে চোরের মতন,
কেহ বা ধর্মের ব্রত করিয়া নিষ্ফল
বাঁচিবে সম্মানে সুখে, এ ধরণীতল
হেন বিপরীত ধর্ম এক বক্ষে বহে—
এত বড়ো এত দৃঢ় কভু নহে নহে।
মালিনীর প্রতি ফিরিয়া
সুপ্রিয়।    হে দেবী, তোমারি জয়! নিজ পদ্মকরে
যে পবিত্র শিখা তুমি আমার অন্তরে
জ্বালায়েছ, আজি হল পরীক্ষা তাহার—