প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
প্রতাপ। তুমি বলতে চাও এ-সকলের মধ্যে উদয়ের কোনো হাত ছিল না?
মন্ত্রী। যদি হাত থাকত তা হলে এত প্রকাশ্যে এ কথার আলোচনা হত না।
প্রতাপ। আচ্ছা, আচ্ছা, তোমার নিঃসংশয় নিয়ে তুমি নিশ্চিন্ত হয়েই বসে থাকো — বিপদটা একেবারে ঘাড়ে এসে পড়ার জন্যে পথ চেয়ে বসে থাকব না। রাজার দায়িত্ব মন্ত্রীর দায়িত্বের চেয়ে ঢের বেশি। অন্যায়ের দ্বারা অবিচারের দ্বারাও রাজাকে রাজধর্ম পালন করতে হয়।
মন্ত্রী। অন্তত বৈরাগী ঠাকুরকে ছেড়ে দিন মহারাজ। প্রজাদের মনে একসঙ্গে এতগুলো বেদনা চাপাবেন না।
প্রতাপ। আচ্ছা, সে আমি বিবেচনা করে দেখব।
মন্ত্রী। চলুন-না মহারাজ, একবার স্বয়ং ভিতরে গিয়ে যুবরাজকে দেখে আসুন-না। ওঁর মুখ দেখলে, ওঁর দুটো কথা শুনলেই বুঝতে পারবেন, গোপনে অপরাধ ওঁর দ্বারা কখনো ঘটতেই পারে না।
প্রতাপ। যারা মুখের ভাব দেখে আর হায়-হায় আহা-উহু করতে করতে রাজ্যশাসন করে তারা রাজা হবার যোগ্য নয়।
বসন্ত। বাবা প্রতাপ, উদয়কে আর কেন কষ্ট দাও। পদে পদেই যদি সে তোমাদের কাছে অপরাধ করে তবে তাকে এই বুড়োর কাছে দাও-না।
তুমি যা মনে করে উদয়কে শাস্তি দিচ্ছ, সেই অপরাধ যে যথার্থ আমার। আমিই যে রামচন্দ্ররায়কে রক্ষা করবার জন্যে চক্রান্ত করেছিলুম।
প্রতাপ। খুড়োমশায়, বৃথা কথা বলে আমার কাছে কোনোদিন কেউ কোনো ফল পায় নি।
বসন্ত। ভালো, আমার আর-একটা ক্ষুদ্র প্রার্থনা আছে। আমি একবার কেবল উদয়কে দেখে যেতে চাই — আমাকে সেই কারাগৃহে প্রবেশ করতে কেউ যেন বাধা না দেয় এই অনুমতি দাও!
প্রতাপ। সে হতে পারবে না।
বসন্ত। তা হলে আমাকে তার সঙ্গে বন্দী করে রাখো। আমাদের দুজনেরই অপরাধ এক — দণ্ডও এক হোক — যতদিন সে কারাগারে থাকবে আমিও থাকব।
[ নীরবে প্রতাপের প্রস্থান
রামমোহনের প্রবেশ
বসন্ত। কী মোহন। কী খবর।
রামমোহন। মাকে আমাদের চন্দ্রদ্বীপে আসবার কথা বলতে এসেছিলুম।
বসন্ত। প্রতাপকে জানিয়েছিস নাকি।
রামমোহন। তাঁকে জানাবার আগে একবার স্বয়ং মাকে নিবেদন করতে গিয়েছিলুম।
বসন্ত। তা, বিভা কী বললে।
রামমোহন। তিনি বললেন, তিনি যেতে পারবেন না।