নবীন
আটক করে না। বাঁধন ছিঁড়ে নিজেও বেরিয়ে না পড়লে ওর সঙ্গে বিচ্ছেদ ঠেকাবে কী করে? আমার ঘর-যে ওর যাওয়া-আসার পথের মাঝখানে ; দেখা দেয় যদি-বা, তার পরেই সে-দেখা আবার কেড়ে নিয়ে চলে যায়।

মোর   পথিকেরে বুঝি এনেছ এবার করুণ রঙিন পথ

তবু ওকে ক্ষণকালের বাঁধন পরিয়ে দিতে হবে। টুকরো টুকরো সুখের হার গাঁথব — পরাব ওকে মাধুর্যের মুক্তোগুলি। ফাল্গুনের ভরা সাজি থেকে যা-কিছু ঝরে ঝরে পড়ছে কুড়িয়ে নেব, বনের মর্মর, বকুলের গন্ধ, পলাশের রক্তিমা — আমার বাণীর সূত্রে সব গেঁথে বেঁধে দেব তার মণিবন্ধে। হয়তো আবার আর-বসন্তেও সেই আমার-দেওয়া ভূষণ প'রেই সে আসবে। আমি থাকব না, কিন্তু কী জানি, আমার দানের ভূষণ হয়ত থাকবে ওর দক্ষিণ হাতে।

ফাগুনের নবীন আনন্দে

 


দ্বিতীয় পর্ব

বেদনা কী ভাষায় রে

মর্মে মর্মরি গুঞ্জরি বাজে।

সে বেদনা সমীরে সমীরে সঞ্চারে,

চঞ্চল বেগে বিশ্বে দিল দোলা।

দিবানিশা আছি নিদ্রাহরা বিরহে

তব নন্দনবন-অঙ্গন-দ্বারে, মনোমোহন বন্ধু,

আকুল প্রাণে

পারিজাতমালা সুগন্ধ হানে॥

 

বিদায়দিনের প্রথম হাওয়াটা এবার উৎসবের মধ্যে নিঃশ্বসিত হয়ে উঠল। এখনো কোকিল ডাকছে, এখনো বকুলবনের সম্বল অজস্র, এখনো আম্রমঞ্জরীর নিমন্ত্রণে মৌমাছিদের আনাগোনা, কিন্তু তবু এই চঞ্চলতার অন্তরে অন্তরে একটা বেদনা শিউরিয়ে উঠল। সভার বীণা বুঝি নীরব হবে, পথের একতারায় এবার সুর বাঁধা হচ্ছে। দূর দিগন্তের নীলিমায় দেখা যায় অশ্রুর আভাস — অবসানের গোধূলিছায়া নামছে।

চলে যায় মরি হায় বসন্তের দিন

হে সুন্দর, যে কবি তোমার অভিনন্দন করতে এসেছিল তার ছুটির দিন এল। তার প্রণাম তুমি নাও। যে গানগুলি এতদিন গ্রহণ করেছ সেই তার আপন গানের বন্ধনেই সে বাঁধা রইল তোমার দ্বারে — তোমার উৎসবলীলায় সে চিরদিন রয়ে গেল তোমার সাথের সাথি। তোমাকে সে তার সুরের রাখী পরিয়েছে — তার চিরপরিচয় তোমার ফুলে ফুলে, তোমার পদপাতকম্পিত শ্যামল শস্পবীথিকায়।

বসন্তে বসন্তে তোমার কবিরে দাও ডাক

ওর ভয় হয়েছে সব কথা বলা হল না বুঝি, এ দিকে বসন্তর পালা তো সাঙ্গ হয়ে এল। ওর মল্লিকাবনে এখনি তো