নবীন

‘ শুকনো পাতা কে যে ছড়ায় ওই দূরে ' বসন্তের ভূমিকায় ঐ পাতাগুলি একদিন আগমনীর গানে তাল দিয়েছিল, আজ তারা যাবার পথের ধূলিকে ঢেকে দিল, পায়ে পায়ে প্রণাম করতে লাগল বিদায়পথের পথিককে। নবীনকে সন্ন্যাসীর বেশ পরিয়ে দিয়ে বললে, ‘ তোমার উদয় সুন্দর, তোমার অস্তও সুন্দর। '

ঝরা পাতা গো, আমি তোমারি দলে।

অনেক হাসি অনেক অশ্রুজলে

ফাগুন দিল বিদায়মন্ত্র

আমার হিয়াতলে।

ঝরা পাতা গো, বসন্তী রঙ দিয়ে

শেষের বেশে সেজেছ তুমি কি এ!

খেলিলে হোলি ধুলায় ঘাসে ঘাসে

বসন্তের এই চরম ইতিহাসে।

তোমারি মতো আমারো উত্তরী

আগুন রঙে দিয়ো রঙিন করি,

অস্তরবি লাগাক পরশমণি

প্রাণের মম শেষের সম্বলে॥

 

সে-যে কাছে এসে চলে গেল তবু জাগি নি।

কী ঘুম তোরে পেয়েছিল হতভাগিনী!

মন ছিল সুপ্ত, কিন্তু দ্বার ছিল খোলা, সেইখান দিয়ে কার নিঃশব্দ চরণের আনাগোনা। জেগে উঠে দেখি ভুঁইচাঁপা ফুলের ছিন্ন পাপড়ি লুটিয়ে আছে তার যাওয়ার পথে। আর দেখি, ললাটে পরিয়ে দিয়ে গেছে বরণমালা, তার শেষ দান, কিন্তু এ-যে বিরহের মালা।

কখন দিলে পরায়ে

স্বপনে বরণমালা, ব্যথার মালা।

প্রভাতে দেখি জেগে

অরুণ মেঘে

বিদায়বাঁশরি বাজে অশ্রু-গালা।

গোপনে এসে গেলে

দেখি নাই আঁখি মেলে।

আঁধারে দুঃখডোরে

বাঁধিল মোরে,

ভূষণ পরালে বিরহবেদন-ঢালা।

হে বনস্পতি শাল, অবসানের অবসাদকে তুমি দূর করে দিলে। তোমার অক্লান্ত মঞ্জরীর মধ্যে উৎ সবের শেষবেলাকার ঐশ্বর্য, নবীনের শেষ জয়ধ্বনি তোমার বীরকণ্ঠে। অরণ্যভূমির শেষ আনন্দিত বাণী তুমি শুনিয়ে দিলে যাবার পথের পথিককে, বললে