নটরাজ

স্বচ্ছ আলোকের পথ রুদ্ধ করি ক্ষুব্ধ শুষ্ক ধূলি

আবর্তিয়া উঠে প্রাণে অন্ধতার জয়ধ্বজা তুলি

চতুর্দিকে। নটরাজ, তুমি আজ করো গো উদ্ধার

দুঃসাহসী যৌবনেরে, পদে পদে পড়ুক তোমার

চঞ্চল চরণভঙ্গি, রঙ্গেশ্বর, সকল বন্ধনে

উত্তাল নৃত্যের বেগে, — যে নৃত্যের অশান্ত স্পন্দনে

ধূলিবন্দিশালা হতে মুক্তি পায় নবশষ্পদল ;

পুলকে কম্পিত হয় প্রাণের দুরন্ত কৌতূহল,

আপনারে সন্ধানিতে ছুটে যায় দূর কালপানে,

দুর্গম দেশের পথে, জন্মমরণের তালে তানে,

সৃষ্টির রহস্যদ্বারে নৃত্যের আঘাত নিত্য হানে,

যে-নৃত্যের আন্দোলনে মরুর পঞ্জরে কম্প আনে,

ক্ষুব্ধ হয় শুষ্কতার সজ্জাহীন লজ্জাহীন সাদা,

উচ্ছিন্ন করিতে চায় জড়ত্বের রুদ্ধবাক্‌ বাধা,

বন্ধ্যতার অন্ধ দুঃশাসন ; শ্যামলের সাধনাতে

দীক্ষা ভিক্ষা করে মরু তব পায়ে ; যে নৃত্য আঘাতে

বাহ্নিবাষ্প-সরোবরে ঊর্মি জাগে প্রচণ্ড চঞ্চল,

অতল আবর্তবক্ষে গ্রহনক্ষত্রের শতদল

প্রষ্ফুটিয়া স্ফুরে নিত্যকাল ; ধুমকেতু অকস্মাৎ

উড়ায় উত্তরী হাস্যবেগে, করে ক্ষিপ্র পদপাত

তোমার ডম্বরুতালে, পূজা-নৃত্য করি দেয় সারা

সূর্যের মন্দির-সিংহদ্বারে, চলে যায় লক্ষ্যহারা

গৃহশূন্য পান্থ উদাসীন।

নটরাজ, আমি তব

কবিশিষ্য, নাটের অঙ্গনে তব মুক্তিমন্ত্র লব।

তোমার তাণ্ডবতালে কর্মের বন্ধনগ্রন্থিগুলি

ছন্দবেগে স্পন্দমান পাকে পাকে সদ্য যাবে খুলি ;

সর্ব অমঙ্গল-সর্প হীনদর্প অবনম্র ফণা

আন্দোলিবে শান্ত লয়ে।

                প্রভু, এই আমার বন্দনা

নৃত্যগানে অর্পিব চরণতলে, তুমি মোর গুরু,

আজিকে আনন্দে ভয়ে বক্ষ মোর করে দুরু দুরু।