শাপমোচন

তবে   যাবার আগে এখান থেকে

এই   লিখনখানি যাব রেখে।

দেখা তোমার পাই বা না পাই

দেখতে এলেম জেনো গো তাই,

  ফিরে যাই সুদূরের পারে॥

রাজা বললে,“প্রিয়ে,না-দেখার নিবিড় মিলনকে নষ্ট কোরো না,এই মিনতি। এখনো তুমি অন্যমনে আছ,শুভদৃষ্টির সময় তাই এল না।”

আন্‌মনা গো আন্‌মনা,

তোমার কাছে আমার বাণীর মাল্যখানি আনব না।

বার্তা আমার ব্যর্থ হবে,   সত্য আমার বুঝবে কবে,

তোমারো মন জানব না।

লগ্ন যদি হয় অনুকূল মৌনমধুর সাঁঝে

নয়ন তোমার মগ্ন যখন ম্লান আলোর মাঝে,

দেব' তোমায় শান্ত সুরের সান্ত্বনা।

ছন্দে গাঁথা বাণী তখন পড়ব তোমার কানে   মন্দমৃদুল তানে,

ঝিল্লি যেমন শালের বনে নিদ্রানীরব রাতে

অন্ধকারের জপের মালায় একটানা সুর গাঁথে—

একলা আমি বিজন প্রাণের প্রাঙ্গনে

প্রান্তে বসে একমনে

এঁকে যাব আমার গানের আল্‌পনা॥

মহিষী বললে,“প্রিয়প্রসাদ থেকে আমার দুই চক্ষু চিরদিনই কি থাকবে বঞ্চিত। অন্ধতার চেয়ে এ যে বড়ো অভিশাপ।”

অভিমানে মহিষী মুখ ফেরালে।

রাজা বললে, “কাল চৈত্রসংক্রান্তি। নাগকেশরের বনে নিভৃতে সখাদের সঙ্গে আমার নৃত্যের দিন। প্রাসাদশিখর থেকে দেখো চেয়ে।

মহিষীর দীর্ঘনিশ্বাস পড়ল। বললে, “চিনব কী করে।”

রাজা বললে “যেমন খুশি কল্পনা করে নিয়ো। সেই কল্পনাই হবে সত্য।”

হায় রে, ওরে যায় না কি জানা।

নয়ন ওরে খুঁজে বেড়ায়, পায় না ঠিকানা।

অলখ পথেই যাওয়া-আসা,   শুনি চরণধ্বনির ভাষা,

গন্ধে শুধু হাওয়ায় হাওয়ায় রইল নিশানা।

কেমন করে জানাই তারে,   বসে আছি পথের ধারে।

প্রাণে এল সন্ধ্যাবেলা   আলোছায়ার রঙিন খেলা,