যোগাযোগ

নবীন। হাঁ, সত্যি।

বিপ্রদাস। এর প্রতিকার কিছু নেই?

নবীন। দৈবের হাতে হয়তো আছে।

বিপ্রদাস। এই নোংরামির মধ্যে কুমুকে পাঠিয়ে কি তার অপমান ঘটাব?

নবীন। আমাদেরও তা সইবে না। যে পর্যন্ত না হাওয়া শুধরে যায়, বউদিকে এখানে রাখা চাই। আমার মুখ দিয়ে আপনার সামনে-যে এমন কথা বুক না ফাটলে বেরোত না! নিজের বংশের লজ্জা স্বীকার করতেই এসেছি, বউরানীকে বাঁচাবার জন্যে।

বিপ্রদাস। আচ্ছা, আমাকে একটু ভাবতে দাও — জানি নে কী করা উচিত।

[ নবীনের প্রস্থান

কুমুদিনীর প্রবেশ

 

কুমুদিনী। বই পরে গোছাব। কী তুমি ভাবছ আমাকে বলো।

বিপ্রদাস। ভাবছি দুঃখ এড়াবার জন্যে চেষ্টা করলে দুঃখ পেয়ে বসে। ওকে জোরের সঙ্গে মানতে হবে।

কুমুদিনী। তুমি উপদেশ দাও, আমি মানতে পারব দাদা।

বিপ্রদাস। আমি দেখতে পাচ্ছি, মেয়েদের যে অপমান সে আছে সমস্ত সমাজের ভিতরে, সে কোনো একজন মেয়ের নয়। ব্যথাটাকে আমারই আপনার মনে করে এতদিন কষ্ট পাচ্ছিলুম, আজ বুঝতে পারছি এর সঙ্গে লড়াই করতে হবে, সকলের হয়ে।

 

বিপ্রদাস বিছানা থেকে উঠে পাশের হাতাওয়ালা চৌকির

উপর বসতে যাচ্ছিল, কুমু ওর হাত চেপে ধরে

 

কুমুদিনী। শান্ত হও দাদা, উঠো না, তোমার অসুখ বাড়বে।

বিপ্রদাস। সহ্য করা ছাড়া মেয়েদের অন্য কোনো রাস্তা একেবারেই নেই ব'লেই তাদের ওপর কেবলই মার এসে পড়ছে। বলবার দিন এসেছে যে, সহ্য করব না। কুমু, এখানেই তোর ঘর মনে করে থাকতে পারবি? ও বাড়িতে তোর যাওয়া চলবে না।

কুমু, অপমান সহ্য করে যাওয়া শক্ত নয়, কিন্তু সহ্য করা অন্যায়। সমস্ত স্ত্রীলোকের হয়ে তোমাকে তোমার নিজের সম্মান দাবি করতে হবে, এতে সমাজ তোমাকে যত দুঃখ দিতে পারে দিক।

কুমুদিনী। দাদা, তুমি কোন্‌ অপমানের কথা বলছ ঠিক বুঝতে পারছি নে।

বিপ্রদাস। তুই কি তবে সব কথা জানিস নে?

কুমুদিনী। না, কতকটা আন্দাজে বুঝতে পারছি। কুৎ সিতের আভাস দেখে এসেছি। তখন বিশ্বাস করতেও লজ্জা হয়েছিল, তাতেও নিজেকে ছোটো করতে হয়।

বিপ্রদাস। মেয়েদের অপমানের দুঃখ আমার বুকের মধ্যে জমা হয়ে রয়েছে।

কুমুদিনী। আমার ভয় হচ্ছে আজকেকার এই-সব কথাবার্তায় তোমার শরীর আরো দুর্বল হয়ে যাবে।

বিপ্রদাস। না কুমু, ঠিক তার উল্‌টো। এতদিন দুঃখের অবসাদে শরীরটা যেন এলিয়ে পড়ছিল। আজ যখন মন বলছে, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত লড়াই করতে হবে, আমার শরীরের ভিতর থেকে শক্তি আসছে।