চিত্রাঙ্গদা
রমণীর কমনীয় দুই বাহু-’পরে
স্বাধীন সে অসংকোচ বল, ধিক থাক্‌
তার কাছে রুনুঝুনু কঙ্কণকিঙ্কিণী।
অয়ি বরারোহে, বহুদিন কর্মহীন
এ পরান মোর, উঠিছে অশান্ত হয়ে
দীর্ঘশীতসুপ্তোত্থিত ভুজঙ্গের মতো।
এসো এসো দোঁহে দুই মত্ত অশ্ব লয়ে
পাশাপাশি ছুটে চলে যাই, মহাবেগে
দুই দীপ্ত জ্যোতিষ্কের মতো। বাহিরিয়া
যাই, এই রুদ্ধ সমীরণ, এই তিক্ত
পুষ্পগন্ধমদিরায় নিদ্রাঘনঘোর
অরণ্যের অন্ধগর্ভ হতে।
চিত্রাঙ্গদা।                            হে কৌন্তেয়,
যদি এ লালিত্য, এই কোমল ভীরুতা,
স্পর্শক্লেশসকাতর শিরীষপেলব
এই রূপ, ছিন্ন করে ঘৃণাভরে ফেলি
পদতলে, পরের বসনখণ্ডসম—
সে ক্ষতি কি সহিতে পারিবে। কামিনীর
ছলাকলা মায়ামন্ত্র দূর করে দিয়ে
উঠিয়া দাঁড়াই যদি সরল উন্নত
বীর্যমন্ত অন্তরের বলে, পর্বতের
তেজস্বী তরুণ তরুসম, বায়ুভরে
আনম্র সুন্দর, কিন্তু লতিকার মতো
নহে নিত্য কুণ্ঠিত লুন্ঠিত— সে কি ভালো
লাগিবে পুরুষ-চোখে। থাক্‌ থাক্‌ তার
চেয়ে এই ভালো। আপন যৌবনখানি
দুদিনের বহুমুল্য ধন, সাজাইয়া
সযতনে, পথ চেয়ে বসিয়া রহিব;
অবসরে আসিবে যখন, আপনার
সুধাটুকু দেহপাত্রে আকর্ণ পুরিয়া
করাইব পান; সুখস্বাদে শ্রান্তি হলে
চলে যাবে কর্মের সন্ধানে; পুরাতন