গোড়ায় গলদ
চন্দ্রবিন্দুটাকে লোপ করে দেবার জায়গা পেতে না।
নিমাইয়ের প্রবেশ

নিমাই। কী হচ্ছে।

বিনোদবিহারী। যা রোজ হয় তাই হচ্ছে।

নিমাই। সেন্টিমেন্টাল আলোচনা! তোমাদের আচ্ছা এক কাজ হয়েছে যা হোক। ওটা একটা শারীরিক ব্যামো তা জান? বেশ ভালো করে আহারটি করলে এবং সেটি হজম করতে পারলে কবিত্বরোগ কাছে ঘেঁষতে পারে না। আর আধপেটা করে খাও, আর অম্বলের ব্যামোটি বাধাও, আর অমনি কোথায় আকাশের চাঁদ, কোথায় দক্ষিণের বাতাস, কোথায় কোকিল পক্ষীর ডাক, এই নিয়ে ভারি মাথাব্যথা পড়ে যায়—জানালার কাছে বসে বসে মনে হয় কী যেন চাই—যা চাও সেটি যে হচ্ছে বাইকার্বোনেট অফ সোডা তা কিছুতেই বু্‌ঝতে পার না।

বিনোদবিহারী। তা যদি বল তা হলে জীবনটাই তো একটা প্রধান রোগ, এবং সকল রোগের গোড়া। জড়পদার্থ কেমন সুস্থ আছে—মাঝের থেকে হঠাৎ প্রাণ নামক একটা ব্যাধি জুটে প্রাণীগুলোকে খেপিয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে। বাতাসে একটা ঢেউ উঠল অমনি কানের মধ্যে ভোঁ করে উঠল, ঈথর একটু নড়ে উঠল অমনি চোখের মধ্যে চিকমিক করতে লাগল, সক্কালবেলায় উঠেই পেটের মধ্যে চোঁ চোঁ করতে আরম্ভ করেছে—এ কি কখনো স্বাভাবিক অবস্থা হতে পারে। স্বাভাবিক যদি বলতে চাও সে কেবল কাঠ পাথর মাটি—

নিমাই। আরে, অতটা দূর গেলে তো কথাই নেই। কিন্তু তোমরা ঐ যে যাকে ভালোবাসা বল সেটা যে শুদ্ধ একটা স্নায়ুর ব্যামো তার আর সন্দেহ নেই। আমার বিশ্বাস অন্যান্য ব্যামোর মতো তারও একটা ওষুধ বের হবে। বালকবালিকাদের যেমন হাম হয়, যুবকযুবতীদের তেমনি ঐ একটা স্নায়ুর উৎপাত ঘটে, কারও বা খুব উৎকট, কারও বা একটু মৃদু রকমের। যখন ও রোগটা চিকিৎসাশাস্ত্রের অধীনে আসবে তখন লক্ষণ মিলিয়ে ওষুধ ঠিক করতে হবে—ডাক্তার রোগীকে জিজ্ঞাসা করবে, “আচ্ছা, তাকে কি তোমার সর্বদাই মনে পড়ে। তার কাছে থাকলে বেশি ভালোবাসা বোধ হয়, না দূরে গেলে? তাকে দেখতে আস না দেখা দিতে আস?” এই সমস্ত নির্ণয় করে তবে ওষুধ আনতে হবে।

চন্দ্রকান্ত। কাগজে বিজ্ঞাপন বেরোবে—“হৃদয়বেদনার জন্য অতি উত্তম মালিশ,উত্তম মালিশ, উত্তম মালিশ। বিরহ-নিবারণী বটিকা। রাত্রে একটি, সকালে একটি সেবন করিলে সমস্ত বিরহ দূর হইয়া অন্তঃকরণ পরিষ্কার হইয়া যাইবে।”

বিনোদবিহারী। আবার প্রশংসাপত্র বেরোবে—কেউ লিখবে—“আমি একাদিক্রমে আড়াইমাস কাল আমার প্রতিবেশিনীর প্রেমে ভুগিতেছিলাম—নানারূপ চিকিৎসায় কোনো আরাম না পাইয়া অবশেষে আপনার জগদ্‌বিখ্যাত প্রেমাঙ্কুশ রস সেবন করিয়া প্রায় সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করিয়াছি—এক্ষণে উক্ত প্রতিবেশিনীর জন্য ভ্যালুপেয়েব্লে বড়ো এক শিশি পাঠাইয়া বাধিত করিবেন, তাঁহার ব্যাধিটা আমার অপেক্ষাও অনেক প্রবল জানিবেন। ইতি—”

নিমাই। ওহে চন্দর, তামাক ডাকো। তোমরা ধোঁয়ার মধ্যে বাস কর, তোমাদের আর তামাকের দরকার হয় না, আমরা পৃথিবীতে থাকি, আমাদের তামাকটা পানটা, এমন-কি, সামান্য ভাতটা ডালটারও আবশ্যক ঠেকে।

চন্দ্রকান্ত। বটে বটে, ভুল হয়ে গেছে, মাপ করো নিমাই। ওরে ভুতো—আবাগের বেটা ভূত—তামাক দিয়ে যা—আচ্ছা ভাই বিনু, মেয়েমানুষের কথা যে বলছিলে কী রকম মেয়েমানুষ তোমার পছন্দসই। তোমার আইডিয়ালটি কী আমাকে বলো দেখি।

বিনোদবিহারী। আমি কী রকম চাই জান? যাকে কিছু বোঝবার জো নেই। যাকে ধরতে গেলে পালিয়ে যায়—পালাতে গেলে