মুকুট

ইন্দ্রকুমার। যেখানেই থাকি তোমার মতো পালিয়ে থাকতুম না।

যুবরাজ। ইন্দ্রকুমার, তুমি অন্যায় বলছ ভাই। সত্য বলতে কি, রাজধর না থাকলে আজ আমাদের বিপদ হত।

ইন্দ্রকুমার। কিচ্ছু বিপদ হত না। রাজধর সৈন্য লুকিয়ে রেখেই আমাদের বিপদে ফেলবার চেষ্টা করেছিল। রাজধর না থাকলে এ মুকুট আমি যুদ্ধ করে আনতুম। রাজধর চুরি করে এনেছে। দাদা, এ মুকুট এনে আমি তোমাকেই পারতুম, নিজে পরাতুম না।

যুবরাজ। (রাজধরের প্রতি) ভাই, তুমিই আজ জিতেছ। তুমি না থাকলে অল্প সৈন্য নিয়ে আমাদের কি বিপদ হত বলা যায় না। এ মুকুট আমি তোমাকেই পরিয়ে দিচ্ছি।

ইন্দ্রকুমার। (রুদ্ধকন্ঠে) রাজধর ক্ষাত্রধর্ম লঙ্ঘন করেছে বলে তোমার কাছ থেকে আজ পুরস্কার পেলে, আর আমি-যে প্রাণকে তুচ্ছ করে বিপদের মুখে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করলুম তোমার মুখ থেকে একটা প্রশংসার কথাও শুনতে পেলুম না! এমন কথা তোমার মুখ থেকে আজ শুনতে হল যে, রাজধর না থাকলে কেউ তোমাকে বিপদ হতে উদ্ধার করতে পারত না! কেন দাদা, আমি কি প্রত্যুষ থেকে আর সন্ধ্যা পর্যন্ত তোমার চোখের সামনে দাঁড়িয়ে লড়াই করি নি! আমি কি রণক্ষেত্র ছেড়ে পালিয়েছিলুম! আমি কি শত্রুসৈন্যের বেষ্টন ছিন্ন করে তোমার সাহায্যের জন্যে আসি নি! কী দেখে তুমি বললে তোমার স্নেহের রাজধর ছাড়া কেউ তোমাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করতে পারত না!

যুবরাজ। ভাই, আমি নিজের বিপদের কথা বলছি নে।

ইন্দ্রকুমার। থাক্‌ দাদা, থাক্‌। আর কিছুই বলতে হবে না। রাজধরের মতো এমন অসাধারণ বীরকে যখন তুমি সহায় পেয়েছ তখন আমার আর প্রয়োজন নেই—আমি চললেম।

যুবরাজ। ভাই, আবার! আবার তুমি আত্মবিস্মৃত হচ্ছ!

ইন্দ্রকুমার। যেখানে আমার প্রয়োজন নেই সেখানে আমার পক্ষে থাকাই অপমান।

[প্রস্থান

ইশা খাঁ। যুবরাজ, এ মুকুট তোমার কাউকে দেবার অধিকার নেই। আমি সেনাপতি, আমি যাকে দেব এ তারই হবে।

রাজধরের মাথা হইতে মুকুট লইয়া যুবরাজকে পরাইয়া দিতে উদ্যত হইলেন

যুবরাজ। (সরিয়া গিয়া) না, এ মুকুট আমি নিতে পারি নে।

ইশা খাঁ। তবে থাক্‌। এ মুকুট কেউ পাবে না। এ কর্ণফুলির জলে যাক। (মুকুট নিক্ষেপ) রাজধর যুদ্ধের নিয়ম লঙ্ঘন করেছেন, উনি শাস্তির যোগ্য।

রাজধর। দাদা, তুমি সাক্ষী রইলে। এ আমি ভুলব না।

যুবরাজ। এইটেই কি সকলের চেয়ে মনে রাখবার কথা! মুকুটটাও যদি জলে গিয়ে থাকে তবে ওর সমস্ত লাঞ্ছনাও যাক। তোমারও যা ভোলবার ভোলো, আমাদেরও যা ভোলবার ভুলে যাই।—দেখি, ইন্দ্রকুমার সত্যিই রাগ করে আমাদের ছেড়ে চলে গেল কি না।